দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় শেষ হলো ইজতেমা
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আখেরী মোনাজাতে দেশের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ইজতেমার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গীর তুরাগতীরে ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই মোনাজাত শুরু ও শেষ হওয়ায় অনেকেই কষ্ট করে দূর দূরান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানের কাছাকাছি এসেও এতে অংশ নিতে পারেননি। এতে অনেকেই আফসোস এবং কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আয়োজক কমিটির এক মুরুব্বী জানান, ভারতের মাওলানা মো. জোবায়রুল হাসান আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন।
প্রতিবারের মতো এবারো টঙ্গীর পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শনিবার মধ্যরাত থেকেই। ফলে মুসল্লিদের পায়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসতে হচ্ছে।
সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষ মাঠের আশেপাশের রাস্তা ও অলি-গলিতে অবস্থান নিয়েছেন।
লাখো মুসল্লির জিকির আজগার ও তাবলিগ মুরব্বীদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার অতিবাহিত হয়।
শীতের তীব্রতা কম থাকায় ঢাকাসহ ৩৩টি জেলার তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের ইজতেমা ময়দানে ব্যাপক হারে আসতে দেখা গেছে। খিত্তাগুলো কানায় কানায় ভড়ে যাওয়ায় মুসল্লিরা অনেকেই নিজ নিজ খিত্তার বাহিরে অবস্থান নিয়েছেন।
প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের মতো শেষ পর্বেও ঢাকা-গাজীপুর, টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকা থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মানুষসহ বিপুল সংখ্যাক মুসল্লি অংশ নেবেন বলে ইজতেমার আয়োজকরা ধারণা করছেন।
দ্বিতীয় ও শেষ পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই দূর দূরান্তের মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন।
যৌতুক বিহীন গণবিবাহ সম্পন্ন: প্রথম পর্বের ন্যায় এ পর্বেও ইজতেমা ময়দানের মূল মঞ্চে শনিবার বাদ আসর কনের অভিভাবক ও বরের উপস্থিতিতে শতাধিক যৌতুক বিহীন গণবিবাহ পড়ানো হয়। বিবাহ শেষে মঞ্চে খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
ইজতেমা শেষে বর ও কনের পিতা জামাতবন্দী হয়ে তিন চিল্লায় (১২০দিন) তাবলিগের কাজে বের হবেন। এ সময়ের মধ্যে দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে শরীয়তের বিধি-বিধান শিক্ষা লাভ করে সংসার জীবন শুরু করবেন বলে ইজতেমার বিবাহ সংক্রান্ত দায়িত্বশীল মুরুব্বীরা জানান।
ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্রে: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের অনেকে আকষ্মিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ইজতেমা ময়দানের উত্তরপাশে নিউ মন্নু মিলের বাউন্ডারির ভেতর খালি জায়গায় ফি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো চালু রয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর সাথেই পুলিশ, র্যাব,এনএসআই, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষও অবস্থিত।
টঙ্গী প্রেসক্লাবের মিডিয়া সেন্টার: বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও সংবাদ পরিবেশন করতে আসা দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের সুবিধার্থে টঙ্গী প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের মিডিয়া সেন্টার চালু রয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় চালু করা এ মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ কর্মীদের জন্য সংবাদ সংগ্রহ ও সংবাদ প্রেরণের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
দ্বিগুণ মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র : ইজতেমা ময়দান এলাকার অস্থায়ী মার্কেটগুলোতে দ্বিগুণ মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগই কাজে লাগছে না।
অতিরিক্ত মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রির ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা জানান, ইজতেমা উপলক্ষে জায়গার ভাড়া অত্যাধিক হওয়ায় তাদের বাধ্য হয়েই বেশি মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে।
মন্নু মিলের খালি জায়গায় অস্থায়ী হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, দু’পর্বের ইজতেমার মোট ৬ দিন হোটেল পরিচালনার জন্য ৫ হাত বাই ৫ হাত জায়গার জন্য তাকে নগদ ৩০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে, কাপড় ব্যবসায়ি আফজাল জানান মন্নু টেক্সটাইল স্কুলের মাঠের ছোট একটি দোকানের জন্য তাকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাই বেশি মূল্যে কাপড় বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে ইজতেমা এলাকার রাস্তাগুলোর ফুটপাত দখল করে স্থানীয় প্রভাবালীরা অস্থায়ী মার্কেট বসিয়ে উচ্চ মূল্যে জায়গা ভাড়া দেওয়ায় দোকানীরা মুসল্লিদের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পকেটমার আটক : ইজতেমা ময়দান থেকে ২১টি মোবাইল সেট ও নগদ ৮ হাজার টাকাসহ এক পকেটমারকে আটক করে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করেছে তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবকরা। শনিবার ইজতেমার দ্বিতীয় দিন ১১ টায় তাকে আটক করা হয়। আটকের পর ইজতেমায় র্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটককৃতের বাড়ি বাগেরহাট জেলার রায়েন্দা থানার মালিয়া গ্রামের লতিফ মৃধার ছেলে রফিকুল।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা: শনিবার ইজতেমা ময়দান ও এর আশ পাশের খাবারের দোকান ও হোটেলে ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রায় অর্ধশাধিক খাবার হোটেলে বিভিন্ন আইনে জরিমানা করেন।
গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য পরিবেশন ও ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ বিক্রয়ের অভিযোগে বিভিন্ন ওষুধ, খাবারের দোকান ও হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করা হয়েছে।