উপজেলা নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা করছে বিএনপি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আগমী ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্র দখল ও প্রশাসনের যোগসাজসে কারচুপির আশঙ্কা করছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
সূত্রমতে, পাঁচ সিটি করপোরেশ নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি শাসকদল আওয়ামী লীগ। ওই পরাজয় দেশে-বিদেশে তাদের জনসমর্থনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিরোধী দলকে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে আনার জন্যই তারা সিটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের ঝুঁকি নেয়নি। তারপরেও তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলসহ অপরাপর বিরোধীদলকে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে সিটি করপোরেশন নিবাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ের পেছনে সরকারের সঠিক কৌশলের অভাবকেই দায়ী মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, বিরোধী দলের সহিংস আন্দোলন মোকাবেলায় উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে চায় শাসকদল আওয়ামী লীগ। প্রার্থীদের পক্ষে ভোটারদের উদ্বুদ্ব করার জন্য নিয়মতান্ত্রিক পন্থার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাংগঠনিক সফর তেমন ভালো ফল আনবে বলে তারা মনে করছে না। এ জন্য সরকার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আশ্রয় নিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না। এজন্য আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে যাকেই ভোট দাও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদেরই পাস করানো হবে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, একতরফা সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ এখন আরও বেপরোয়া। তারা উপজেলায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চায়। এজন্য উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণে সরকারি বাহিনীর হিংস্রতা মারাত্মক রুপ নিয়েছে। এমনিতেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নতুন নতুন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে। অনেকে ক্রসফায়ার আতঙ্কে ভুগছেন। বহু নেতাকর্মী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। এ কারণে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েও বিএনপি-জামায়াতের নেতারা নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণার সাহস পাচ্ছেন না।
যশোরের কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হামিদুল ইসলাম এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সরকারের দুঃশাসনে তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে সার কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আমার বিপুল জনসমর্থন রয়েছে। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চায়। কিন্তু আমরা নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছি না। আমাদের অনেক নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারে দিচ্ছে। কেউ কেউ ক্রসফায়ার আতঙ্কে ভুগছেন। ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। উপজেলার জামাল ইউনিয়নের বড় তালিয়া গ্রামের ২০ বাড়ির পুরুষ বাড়ি ছাড়া। আওয়ামী লীগের হামলায় আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিসাধীন। পুলিশ আমাদের মামলা না নিয়ে উল্টো ওইসব কর্মীকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করে।
কেশবপুর উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বদরুজ্জামান মিন্টু এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, আওয়ামী লীগের ভোট চুরির ট্রেডিশন আছে। একতরফা ভোটারবিহীন নিবাচনেও তারা ভোট জালিয়াতি করেছে। আমাদের বিপুল জোয়ারের মধ্যেও তারা টেবিল কাস্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসবে আমাদের নেতাকর্মীদের এখনো মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। উপজেলার পাজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মারুফ হোসেন বিজন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন মেহেরপুর বিএনপির দুর্গ। সুষ্ঠু নির্বাচ হলে জনগণ বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী দলীয় প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তারা আমাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়তে বহু চক্রান্ত করছে। ২৪ টি মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। জোটের ৪ জন নেতাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে বিএনপির একজন, জামায়াতের ৩ জন। প্রাণ ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
নোয়াখালী সদর উপজেলার প্রার্থী এডভোকেট আব্দুর রহমানও নিজের বিজয় নিয়ে শঙ্কিত। সব দলের লোক তাকে ভোট দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কিন্তু ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অন্যায় অত্যাচারে নোয়াখালীর মানুষ শুধু এখন নয়, শেখ মুজিবের জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।