প্রধানমন্ত্রী পেলো পাকিস্তান
অবশেষে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দেশের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেছে পাকিস্তান। ৮৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মীর হাজার খান খোসো’কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা হয় রোববার।
তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং অন্তবর্তীর্কালীন প্রশাসনের নেতৃত্ব দেবেন।
একটি সংসদীয় কমিটি ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে কোনো প্রার্থীর ব্যাপারে একমত হতে না পারার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন খোসোকে নির্বাচিত করে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফখরউদ্দিন ইব্রাহিম ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে পাঠানো চারটি নামের প্রত্যেকটির ব্যাপারে আন্তরিক ও খোলামেলা আলোচনার পর মীর হাজার খান খোসোকে বেছে নিয়েছি আমরা।’
বিদায়ী সরকার খোসো ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সাবেক গর্ভনরের নাম প্রস্তাব করেছিল। অপর দিকে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) অপর একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও একজন রাজনীতিবিদের নাম প্রস্তাব করেছিল। কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নির্বাচন।
ধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার এক সপ্তাহ এবং প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার চার দিন পর খোসো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্বাচিত হলেন।
প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ১১ মে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকার অপর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যাচ্ছে।
১৯৪৭ সালে ভারত থেকে বিভক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানে এ পর্যন্ত তিনটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে এবং চার জন সামরিক শাসক দেশটির ক্ষমতায় ছিল।
অপর দিকে এই ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের মাটিতে পা দেন। ৪ বছরের বেশি সময় ধরে নির্বাসনে কাটানোর পর তালেবানের মৃত্যুর হুমকি উপেক্ষা করে আজ রোববার পাকিস্তানে পৌছেঁছেন মোশাররফ। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।
মীর হাজার খান খোসো ১৯২৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বালুচিস্তানের জাফরাবাদ জেলার আজাম খান নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে সিন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পড়াশোনা শেষে ১৯৫৬ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল. বি. করেন। ১৯৫৭ সালে আইন পেশায় যোগ দিয়ে ১৯৫৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮০ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তিনি বালুচিস্তান হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারক ছিলেন। ১৯৮৫র ৩১ মার্চে তিনি পুনরায় ওই পদে যোগ দেন। ১৯৮৭র একই দিনে তিনি স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি বালুচিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। ১৯৯১ সালে তিনি এই পদ থেকে অবসর নেন।
এর মাঝে ১৯৯০ এর ২৫ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত তিনি বালুচিস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর ছিলেন।
১৯৯১ র ১৮ অক্টোবর খোসো ফেডারেল শরিয়াহ আদালতে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯২ র ১৭ নভেম্বর তিনি ওই আদালতের প্রধান বিচারপতির পদ অর্জন করেন। ১৯৯৪ র ৮ জুলাই পর্যন্ত তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই হবে তার প্রধান কাজ’। প্রয়োজনমত মন্ত্রিপরিষদের বাকি দায়িত্ব বণ্টন করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রাখব’।
সব রাজনৈতিক দলের সাথে সমান সম্পর্ক রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।