হত্যা মামলার আসামিরাও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী

ডেস্ক রিপোর্ট, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ উপজেলা নির্বাচনে চুরি থেকে খুনের মামলার আসামিরাও প্রার্থী হয়েছেন।মামলার আসামি এমন প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বেশি। এসব মামলার বেশির ভাগই রাজনৈতিক মামলা। এসব মামলায় জামিন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন তারা। অন্যদিকে হত্যাসহ গুরুতর অপরাধের মামলার আসামিরাও প্রার্থী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে। স্থানীয় সূত্র ও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার নির্বাচন অফিসে তাদের হলফনামা জমা দিচ্ছেন। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সব প্রার্থীর হলফনামা জমা হলে সেখান থেকে যে কেউ চাইলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম মিরসরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। তার নামে সংশ্লিষ্ট থানায় ৮টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার মধ্যে বেশিরভাগ মামলাই মহাজোট সরকারের সময়ে দায়েরকৃত। জানা গেছে ‘রাজনৈতিক’ কারণে দায়ের হওয়া এসব মামলার সবকটিতে তিনি জামিনে আছেন।

উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানী সংলগ্ন মানিকগঞ্জ জেলায়। এখানে মানিকগঞ্জ সদর ও হরিরামপুর উপজেলায় মোট ১৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন। এর মধ্যে হরিরামপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। গত ২৯শে জানুয়ারি বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান সাঈদুর রহমানের ভাইপো দেওয়ান রুবেলকে খুনের দায়ে আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সদস্য ইউসুফ আলীকে প্রধান আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হোসেনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি হরতাল ও অবরোধে নাশকতার অভিযোগে সদর থানায় মামলা হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী একাধিক। জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সুমনের নামে কিশোরগঞ্জ ও করিমগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটিসহ মোট ৫টি মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। একটি মামলা এখনও তদন্তাধীন। একই উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দুটি। এর মধ্যে করিমগঞ্জ থানায় একটি ও ময়মনসিংহ স্পেশাল জজ আদালতে একটি। দুটি মামলাতেই তিনি জামিনে আছেন। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি কাইয়ুম খান হেলালের নামে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক মামলা রয়েছে যার সবকটিতে তিনি জামিনে রয়েছেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের নামে অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে। জামিনে আছেন তিনিও। অপর প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি কাজল ভূঁইয়ার নামেও একাধিক মামলা রয়েছে।

খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা আ খ ম তমিজউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৬টি। বেশিরভাগ মামলা দায়ের হয়েছে গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ও পরে তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে আরও ৬টি। সব মামলায় জামিনে আছেন তিনি। খুলনার দীঘলিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাইফুর রহমান মিন্টু। সংশ্লিষ্ট থানায় তার নামে মামলা রয়েছে ৬টি। সবগুলো মামলায় জামিনে আছেন তিনি।

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মো. গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, দোকান, বসতবাড়ি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় ৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। রাজনৈতিক মামলার আসামি হলেও তিনি নির্বাচনে লড়ছেন।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াতের মাওলানা আবদুস সাত্তার। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা রয়েছে। তবে তিনি জামিনে আছেন।

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন মো. আবেদ হোসেন। বছরখানেক আগে তার নামে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। কদিন আগে তিনি এ মামলায় জামিন পেয়েছেন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. আসাদুল হক ভূঁইয়ার নামে ২০১১ সালে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছিল। ইতিমধ্যে তিনি এ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।

যশোরের অভয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিন অধিকারী ব্যাটা। তার বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের সার অধ্যাদেশ আইনে সারের অবৈধ মজুদদারির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলা এখনও চলমান।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় দুই প্রার্থী বিএনপির সোহেল আহমদ চৌধুরী ও জামায়াতের নিজাম সিদ্দিকীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। বালাগঞ্জে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী সাজিদ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। জৈন্তাপুরে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধেও মামলা আছে।

সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রথম পর্যায়ের ৪টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা নির্বাচনী লড়াইয়ে নামেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় জাতীয়তাবাদী নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মজিবুর রহমান লেবু বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়া ২০টি মামলার আসামি, যার বেশিরভাগই রাজনৈতিক। অন্যদিকে, জামায়াত সমর্থক প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলামের নামে একটি মামলা থাকলেও তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

সোনাতলা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল তৈয়ব জাকিরের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। এছাড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম মামুনের বিরুদ্ধে ১১টি, নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াত নেতা নূরুল ইসলাম মণ্ডলের বিরুদ্ধে ৭টি, শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী স্থানীয় জামায়াত নেতা দবির উদ্দিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে।

দু’দফায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কুষ্টিয়ার ৫ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অনেকেই একাধিক মামলার আসামি। এদের মধ্যে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আরেফিন নিজ দলীয় এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদের উপর বোমা হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ওই ঘটনায় তিন ব্যক্তি নিহত হয়। এছাড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী আবদুল গফুরের নামেও মামলা রয়েছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুবক্কর সিদ্দিক ট্রিপল মার্ডার মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি। এছাড়া বিএনপির তৌহিদুল ইসলাম আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান আলী ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী রুবেল মাহমুদ রতনের নামেও একাধিক মামলা রয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে রয়েছে দুটি মামলা। এ ছাড়া জামায়াতের প্রার্থী মোশাররফ হুসাইনের বিরদ্ধেও মামলা আছে।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা আছে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শমসের জামান ভূঞা চুরি ও মারামারির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলার আসামি। আর বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অলিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল মারামারি ও বিধিবহির্ভূতভাবে ইট পোড়ানোর অভিযোগে। অলিউর রহমান উভয় মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এছাড়া চেয়াম্যান পদের প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম নির্বাচনী বিধিমালা ভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলার আসামি। এর মধ্যে নির্বাচনী আইনের মামলাটি বিচারাধীন। আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত গোলাম ফরিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, মারামারি ও চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুটি মামলা ছিল। উভয় মামলায় তিনি খালাস পেয়ে এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠেয় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন তাদের অধিকাংশের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। উপজেলা যুবদল সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা জিন্নাত আলীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। আবদুল্লাহ আল মামুনের নামে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা ৫টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ৪টি মামলার নিষ্পত্তি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। ১টি চলমান রয়েছে। জামায়াতের আমীর জিন্নাত আলীর নামে জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক ২টি মামলা চলমান। এছাড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ৩টি মামলার দুটিতে খালাস পেয়েছেন, ১টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আজিজুল আলমের মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ