রাবির ছাত্রদের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা হয়েছে

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনাকে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ‘প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ২ ফেব্রুয়ারি হামলার ঘটনায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রাথমিক তদন্তে এমন দাবি করা হয়েছে৷

তদন্ত কমিটির সমন্বয়কারী আরিফ রেজা মাহমুদ জানান, হামলার পরদিন তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আট ছাত্রের সমন্বয়ে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেন৷ গঠনের পর কমিটি টানা কাজ করে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করেছে৷  এরইমধ্যে তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে৷ শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে৷

তিনি জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তারা পত্রপত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি, ভিডিও ফুটেজ, প্রতিবেদন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ দায়িত্বশীলদের বিবৃতি, মামলার এজাহার এবং অপ্রকাশিত ৬৫০টি ছবিকে (স্থির চিত্র) কাজে লাগিয়েছেন৷

তিনি বলেন, এসব বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং পুলিশ যৌথভাবে অংশ নিয়েছে৷

আরিফ রেজা মাহমুদের দাবি, এ যৌথ হামলার প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে ছবি রয়েছে৷ তারা এ হামলাকে তাই সাধারণ ছাত্রদের ওপর ‘প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখেছে, এ ঘটনায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে৷ আর হামলাকারী হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা গেছে, কোনো মামলাতেই তাদের কাউকে আসামি করা হয়নি৷ আসামি করা হয়েছে আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র, বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী , শিবিরের লোকজন এবং অজ্ঞাতপরিচয় বহিরাগতদের৷

আরিফ রেজা মামুদ  বলেন, প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত ছবি দিয়ে তারা হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছেন৷

সমন্বয়কারী আরিফ রেজা মামুদ ছাড়া ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সাত সদস্য হলেন উদিসা ইসলাম, আরাফাত সিদ্দিকী, ফেরদৌস আহমেদ, সালাহউদ্দিন সুমন, সরোয়ার সুমন, বাঁধন অধিকারী এবং জাহিদ জন৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রাক্তন ছাত্ররা এখন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন৷

তারা জানান, এ অনুসন্ধানের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে ১৮ ফেব্রুয়রি৷ তার আগে তারা সরেজমিন অনুসন্ধান শেষ করবেন৷ সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন ও সাক্ষাৎকার ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের কাজ এখন চলছে বলে জানান তারা৷

আরিফ রেজা মাহমুদ জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তারা নিশ্চিত হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ফি বাড়ানো এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে নামেন৷ এর পিছনে কোনো রাজনৈতিক বা কোনো ছাত্রসংগঠনের ইন্ধনের কোনো প্রমাণ তারা পাননি৷ হামলার প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়৷ আর হামলার দিন ২ ফেব্রুয়ারি ৮ খেকে ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন৷

তিনি জানান, এ আন্দোলনে কয়েকজন শিক্ষকের নৈতিক সমর্থন থাকলেও তারা আন্দোলনের পরিকল্পনা বা আন্দোলনের সঙ্গে কোনোভাবেই সরাসরি যুক্ত ছিলেন না৷

প্রাক্তন ছাত্রদের কেন এ ফ্যাক্ট ফাউন্ডিং কমিটি এবং এ কমিটির বৈধতা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ রেজা মাহমুদ বলেন, ‘প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না৷ আমরা সঠিক তথ্য জানতে চাই৷ দেশের মানুষকে তা জানাতে চাই৷ আর দেশের নাগরিকদের যে কোনো ঘটনা অনুসন্ধান বা তদন্তের অধিকার আছে৷ অতীতেও এর নজীর আছে৷’

এ নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, নাগরিকেরা এ ধরনের তদন্ত কমিটি বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করতে পারেন৷ এতে আইনে কোনো বাধা নেই৷ আবার আইনের দিক থেকে এর কোনো গুরুত্বও নেই৷ তবে তিনি মনে করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে সরকারের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত৷

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ