তাজরীনের চেয়ারম্যান-এমডি কারাগারে

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

রোববার দুপুরে ঢাকার মূখ্য বিচারিক হাকিম তাজুল ইসলামের আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আসামির আইনজীবী গোলাম দাউদ বলেন, ‘আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়েই আসামিরা আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আসামিরা কোনো অপরাধ করেননি। এটি ছিলো নিছক দুর্ঘটনা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আসামিরা ক্ষতিগ্রস্ত গার্মেন্ট শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে তাজরিন ফ্যাশনের ১২৫ কোটি টাকা ক্ষাতি হয়। আসামিরা নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত।’

তিনি বলেন, ‘সামনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টস সামগ্রী তৈরির অর্ডার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ মুহূর্তে আসামি যদি কারাগারে চলে যায় তাহলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবে তাজরিন ফ্যাশন। এখানে পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। তাদের জীবনজীবিকা হুমকির সম্মুখিন হবে। আসামি প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ি, তিনি পলাতক হবেন না।’

অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, ‘আসামিদের কারণেই ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন মারা যান। এই মালিকদের চরম অবহেলা ও উদাসিনতার কারণে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। এরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। এক মাসের অধিক সময় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত।’

তিনি আরো বলেন, ‘জুরাইন কবরস্থানে নিহত ৮৪ জনকে কবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৮ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের পরিচয় শনাক্তের জন্য আসামিরা কোনো ধরনের সহায়তাও করেনি।’

জামিন শুনানি চলাকালে আদালত চত্বরে ক্ষতিগ্রস্ত গার্মেন্ট শ্রমিকরা এ আসামির ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়।

এর আগে সকালে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন মালিক দেলোয়ার হোসেন। ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। এ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল আত্মসমর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সকাল ১১টায় জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন নিহত এবং দুই শতাধিক শ্রমিক আহত ও দগ্ধ হন।

ঘটনার পর শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, আগুন লাগার পরও কারখানার ছয়টি ফ্লোরের কয়েকটিতে দরজা আটকে রাখা হয়েছিল, শ্রমিকদের নিচে নামতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ওই কারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারাত বিধি অনুসরণ না করা এবং অবহেলারও প্রমাণ পাওয়া যায়।

অভিযোগ পেয়ে ঘটনার পরদিনই আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর (দণ্ডবিধির ৩০৪ ক) ধারা যুক্ত করা হয়। গত বছর ২ জানুয়ারি সিআইডি এ মামলার তদন্ত শুরু করে।

এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর দেলোয়ার ও মাহমুদাসহ ১৩ জনকে আসামি করে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৩০৪ (ক) ধারা অনুযায়ী ‘অপরাধজনক নরহত্যা’ও ‘অবহেলার কারণে মৃত্যুর’অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগপত্রের ১৩ আসামির মধ্যে প্রকৌশলী এম মাহাবুবু মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল ও প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু পলাতক।

তাজরিনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম লাভলু, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমীন, নিরাপত্তারক্ষী রানা ওরফে আনারুল, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমীন ও লোডার শামীম মিয়া জামিনে রয়েছেন। আর কারখানার সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান রয়েছেন কারাগারে, তার পক্ষেও জামিনের আবেদন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এ মামলায়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ