সোমবার মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব বদলে বৈঠক
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আন্দোলন ও সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিদায় নিতে হচ্ছে মহানগর বিএনপির বতর্মান আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামকে।
বিরোধী দলের দাবি মেনে না নিয়ে একতরফাভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণার পর বিরোধীদলের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। মাঠপর্যায়ে ব্যাপকভাবে আন্দোলন গড়ে উঠলেও ঢাকায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। মহানগরের দায়িত্বে থাকা নেতারা পড়েন ব্যাপক সমালোচনার মুখে। দলের মধ্যে দাবি ওঠে বতর্মান কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার।
এছাড়া একই দাবি ওঠে তৃণমুল থেকেও। কর্মীরা আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য মহানগর বিএনপির নেতাদের দোষারোপ করে এই কমিটি পুনঃগঠনেরও দাবি জানায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাদের সোমবার গুলশা্ন কার্যালয়ে বৈঠকে বসবেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে ঢাকা মহানগর বিএনপির বতর্মান ১৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ভেঙে দিতে পারেন দলের নেত্রী। গঠন করতে পারেন আরো একটি আহ্বায়ক কমিটি।
এদিকে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়া হতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লবিং শুরু করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের বতর্মান আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামের একক ক্ষমতা খর্ব করতে মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করা হবে। আর বিএনপির হাইকমান্ড যদি এই সিদ্ধান্ত নেয় তাতে আপত্তি নেই নেতাকর্মীদের। বরং কর্মীরা মনে করেন এতে ঢাকা মহানগরের নেতৃত্বের একক ক্ষমতা থাকবে না। উত্তর আর দক্ষিণ করা হলে তখন দুই অংশের নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।
এছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করে উত্তর আর দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামীতে যখন সিটি নির্বাচন হবে তখন যাতে নেতৃত্বের সংকটে পড়তে না হয়ে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে অনুরোধ করেছে নেতাকর্মীরা।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি যদি আবারো দেয়া হয় সেক্ষেত্রে এক মাসের সময় দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডের নতুন করে কমিটি গঠন করা হবে।
দলের সূত্র জানায় ঢাকা মহানগরকে উত্তর আর দক্ষিণে ভাগ করা হলে দুই কমিটিতে যাদের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি বা আহবায়ক পদে বতর্মান কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এস এম কাইয়ুম, শাহাবুদ্দীন আহমেদ, আজগর আলী মাতববর ও সাবেক কমিশনার হাসান।
এছাড়া মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন তেজগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, বনানী থানা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বীর প্রতিক, বাড্ডা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বতর্মান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ, মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবুল বাশার এবং কারাবন্দি নেতা সাবেক কমিশনার নাসিরুদ্দিন পিন্টু।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন শাহবাগ থানার সভাপতি ননী তালুকদার, ৩৪ নম্বর ওর্য়াডের সাবেক কমিশনার আলহাজ্ব মকবুল এবং সুত্রাপুর থানার মোহনের নাম নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন হাজী ইউসুফ ও আকবর হোসেন নান্টু।
আর যদি ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দু’ভাগ করা না হয় সেক্ষেত্রে ২১ সদস্যের এই কমিটিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে থাকতে পারেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সালাউদ্দিন আহমেদ, কাজী আবুল বাশার, এম এ কাইয়ুম প্রমুখ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলের চেয়াপারসন এখন এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। নতুন করে আন্দোলন গতিশীল বেগবান করতেই এ উদ্যোগ।
সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, মহানগর কমিটি ভেঙে দু’ভাগ করুক, চার ভাগ করুক, পাঁচ ভাগ করুক এটা সমস্যার সমাধান নয়। সত্যিকার অর্থে যেটা করতে হবে তা হলো, একেবারে গ্রাসরুট থেকে কমিটি করতে হবে। তা যদি করতে না পারে তাহলে দল সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত হবে না।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কমিটি করতে হবে। যদি এভাবে কমিটি করতে পারেন; তাহলে কিছু না কিছু সমস্যার সমাধান হবে।
যদি কিছু করতেই হয় তাহলে সেটা আমি মনে করি একেবারে নিম্ম পর্যায় থেকে কমিটি করাটাই উচিৎ। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে এটা আমি রাজনৈতিকভাবে মনে করি না।