সহসা সংলাপের সম্ভাবনা নেই

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ   অসম শক্তির মধ্যে সংলাপ হয় না। সংলাপের জন্য প্রয়োজন শক্তির ভারসাম্য। বিএনপি যদি এখন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সরকারকে শক্তি সামর্থের জানান দিতে পারে তবেই সংলাপ হতে পারে। নইলে সংলাপের সম্ভাবনা শূন্য বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বাধ্য করতে সরকারের গৃহীত নীতির কাছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ধরাশায়ী। আবার নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপির নির্বাচন বর্জনসহ অন্যান্য সিদ্ধান্তের কারণে সরকারও কোণঠাসায়। যে কারণে নির্বাচন পূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তী কাছাকাছি সময়ে সরকার সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচনের ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্লেষকদের দাবি, বিএনপি যখনই আন্দোলনের মাধ্যমে তীব্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করে তখনই সরকার সংলাপের আহ্বান জানায়। আবার বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমঝোতার আহ্বান জানালে সরকার সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে হার্ডলাইনে চলে যায়।

সংলাপ না হওয়ার কারণ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সফল সংলাপের জন্য প্রয়োজন বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি। রাজপথের আন্দোলনে না থাকায় সরকার বিএনপিকে দুর্বল মনে করে। বিএনপি যদি শক্তি সামর্থের প্রমাণ দিতে না পারে তাহলে সংলাপের সম্ভাবনা একবারে ক্ষীণ, শূন্য।

সংলাপ প্রশ্নে সরকারের বিগত কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বিএনপি ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচির পক্ষে অবস্থান নেয়ায় সরকার বেকায়দায় পড়ে। হেফাজতের প্রতি বিএনপির সমর্থন প্রত্যাহারের কৌশল হিসেবে গত ২ মে প্রধানমন্ত্রী ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে  খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, আসুন আমরা বসি।আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করি।আপনারা যেখানে বসতে চান আমরা সেখানে বসতে রাজি। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে সংলাপের সূর্য উদিত হয়। পরদিনই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী  গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, অনির্বাচিত কারো কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে না। তবে সব দলের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে এ সরকার গঠনে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি অনড় নই। কখনো অনড় ছিলাম না। সব সময় সমঝোতা করে চলি। তবে নীতির প্রশ্নে কখনো আপস করি না।

ওদিকে গত অক্টোবরে বিরোধী জোটের তিনদিনের টানা হরতালের আগের দিন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সহিংস ঘটনা হয়েছে। ওই সংহিসতায় সরকারি মহলেও আতঙ্কের খবর পাওয়া যায়। উদ্ভুত সঙ্কট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে হরতাল প্রত্যাহার করে সংলাপের প্রস্তাব দেন। সে সময় হরতাল প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেও সংলাপের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান বিরোধী নেত্রী।  কিন্তু হরতাল শেষে আর সংলাপ হয়নি। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে সরকারের আহ্বানে বিএনপি নেত্রী সাড়া দেয়নি। এখন সংলাপ চাইলে বিএনপিকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অক্টোবর থেকে ১৮দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধে  দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ঢাকার সাথে সারা দেশের বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিরোধীদলের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি নির্বাচন কমিশন অফিস। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি জাতিসঙ্ঘ কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে সরকার। হতাশ হয় নেতাকর্মীরা।

এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দু’দিন আগে গত ৩ জানুয়ারী সিলেটের কাজির বাজারে সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের  তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পর সমঝোতার ভিত্তিতে যেকোনো সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।

নির্বাচনের পর সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে মুহিত বলেন, না, পাঁচ বছরতো আমরা বলিনি। আমরা বলছি এই নির্বাচনে সব দলের ‘পার্টিসিপেশন’ হয়নি। সুতরাং আমরা চাই আরেকটি নির্বাচন।

অথচ গত ২১ জানুয়ারি ঢাকায় সাংবাদিকদের মুহিত বলেন, নতুন সরকার ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিদেশের কোনো চাপ রয়েছে কিনা সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে মুহিত বলেন, ‘হোয়াট ইজ চাপ? আমরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত সরকার, ৫ বছরই থাকব।’

আওয়ামী লীগ সূত্র মতে, নির্বাচনের আগে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু এখন আর সংলাপ নিয়ে সরকার ভাবছে না। বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ। নিজেদের জোট নিয়েও তাদের টানাপোড়েন। এখন তারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার মতো সাংগঠনিক শক্তিও তাদের নেই। কারণ সংলাপ-সমঝোতা নিয়ে এখন সরকারের ওপর বিদেশী কোনো চাপ নেই।  সংলাপ প্রশ্নে বিদেশীদের এই  গতানুগতিক আহ্বানে সরকারের কিছু আসে যায় না।  শুরুতে গুটিকয়েক দেশ সরকারকে সমর্থন জানালেও সময়ের সাথে সাথে অভিনন্দন জানানো দেশের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যায়ক্রমে সব দেশই সরকারকে সমর্থন জানাবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের সম্পূর্ণ অনুকূলে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আবারো সংলাপের তাগিদ দেন। পরদিন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য  মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি একটি জনবিচ্ছিন্ন দল। তাদের সাথে আমরা সংলাপে বসব কি-না ভাবতে হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ শনিবার কুড়িগ্রামে এক জনসভায় বলেছেন, বিএনপি এ সরকারকে অবৈধ বলেছে। তাই তাদের সাথে সংলাপের সুযোগ নেই। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েও সরকার ভাবছে না।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ