খেজুরতলায়ই মেলে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  ১২ ঘণ্টা মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন সুন্দরবনে অবস্থান করে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষণ্ন সবাই। হঠাৎ করেই দুবলার চরের এক জেলে আজব খেজুর গাছের গল্প বললেন। এই খেজুর গাছের তলায় সবসময় থাকে মানুষের ভিড়। আর সব মানুষের হাতে ও কানে মোবাইল ফোন। কারণ দুবলার চরের শুধু এ খেজুরতলায়ই মেলে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক।

ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে সাংবাদিক ও র‌্যাব সদস্যরা এমন দৃশ্য দেখে হতবাক। সবাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) এক বিশেষ ট্যুরে সাংবাদিক ও র‌্যাব সদস্যরা শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় দুবলারচর ভ্রমণে যান। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন-৯ লঞ্চটি পশুর নদীর মুখে প্রবেশ করা মাত্রই সবার মোবাইলের নেটওয়ার্ক চলে যায়। ১২ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে সবাই যখন দুবলারচরে পৌঁছান তখন সবার মন খারাপ। কারও সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পারায় সবাই বিষণ্ন। সবাইকে বিচলিত দেখে দুবলারচরে থাকা কয়েকজন মোবাইলে কথা বলার জন্য তাদের খেজুরতলায় যেতে বলেন। তখন সবাই সেখানে গিয়ে মোবাইলে কথা বলেন।

দুবলারচর খেজুর গাছতলার দোকানদার বেলাল হোসেন বলেন, চার বছর আগে খেজুর গাছতলায় মাছের বেপারিদের আড়ত বসত। একদিন একজন মোবাইল সঙ্গে নিয়ে মাছ কিনতে যান। এ সময় হঠাৎ তার মোবাইলে রিং বেজে ওঠে। তখন থেকেই আবিষ্কার হয় ওই খেজুর গাছতলায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এরপর থেকে জেলে, শ্রমিক ও আগত পর্যটকরা ওই খেজুর গাছতলায় গিয়ে মোবাইলে কথা বলেন।

সফরে যাওয়া র‌্যাবের সাবেক মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এম সোহায়েল (ডিজিএফআইয়ে কর্মরত) বলেন, এটা সত্যিই অলৌকিক ঘটনা। মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় আমরা সবাই বিচলিত। তারপর জেলেদের দেখিয়ে দেয়া খেজুরতলায় গিয়ে মোবাইলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলি। খেজুরতলায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় তা সবার অজানা।

দুবলারচরের অন্য একটি নাম মরণচর। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ঝড়ে হাজার হাজার মানুষ সাগরে ভেসে যায়। বালুরচরে মরদেহের স্তূপ পড়ে ছিল। সেই থেকে ওই চরের নামকরণ হয় মরণচর। এ চরে শুধুই পুরুষের বসবাস। কোনো নারী নেই। নেই কোনো শিশু ও বৃদ্ধের আনাগোনাও। এ মরণচরে প্রতি বছর শীতকালে আশপাশের জেলাগুলোর জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এসে বসবাস শুরু করেন। তাদের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। দুবলারচরে তারা ছোট ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। শীত শেষে মার্চে তারা ফিরে যান নিজেদের বসতভিটায়। রান্নাবাড়া, ঘর লেপাসহ সব কাজই করতে হয় পুরুষদের।

শফিকুল নামের এক জেলে বলেন, বঙ্গোপসাগরের গর্জন ও সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের এখানে আনা হয় না। আমরা এখানে এসে নিজেরা সব কাজ করি। তিনি আরও বলেন, ভাটার সময় মাছ ধরি। এখানে একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম রেডিও। এছাড়া অবসরে গল্পগুজব, তাস ও লুডু খেলে সময় পার করি। চরে জেলেদের অস্থায়ী ঘরের পাশাপাশি রয়েছে কোস্টগার্ডের তিনতলা একটি ভবন। এছাড়া রয়েছে একটি মসজিদ ও মন্দির। আলোকিত বাংলাদেশ’র সৌজন্যে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ