চব্বিশের বেশি আমলার দূর্ণীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামছে দুদক

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  বর্তমানে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত ২৪ জনের বেশি আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ঘুষগ্রহণ, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, সার্টিফিকেট জালিয়াতি এমনকি প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে জমি দখলের মতো অভিযোগের ভিত্তিতে এ অনুসন্ধান চালানো হবে। সম্প্রতি আদালত কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩২ (ক) ধারা অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় আমলাদের বিরুদ্ধে এ অনুসন্ধানে নেমছে দুদক। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন পূর্ণসচিব, একজন অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ১১ জন,ছয়জন উপ-সচিব, চারজন সিনিয়র সহকারী সচিব এবং দুইজন সহকারী কমিশনার (ভূমি)ও অন্য কর্মকর্তারা রয়েছেন।

যে সব আমলার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন (সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব), স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজউদ্দিন মিঞা (এমএম নিয়াজ উদ্দিন), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম তালুকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ভারপ্রাপ্ত) সচিব এ. কে. এম. আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব (বর্তমানে বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায় ও যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেন, মানিকগজ্ঞ্জের জেলা প্রশাসক জগেন্দ্র নাথ সরকার, মানিকগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি)আব্দুর রউফ, গাজীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: মোতাকাব্বির, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো: সাজেদুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দীপন চাকমাসহ আরো কয়েকজন।

দাখিলকৃত অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর এ তালিকা আরও বাড়তে পারে। অভিযোগ বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন পর্যায়ক্রমে এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেবে বলেও জানিয়েছে দুদক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন এমন অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সম্প্রতি এ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক যতীন কুমার রায়কে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা এবং উপ-পরিচালক বেনজীর আহম্মদকে এর তদারককারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের এ সচিবের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজউদ্দিন মিঞা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম তালুকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব এ. কে. এম. আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব (বর্তমানে বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান) শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ জামানের বিরুদ্ধেও। তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ সব অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।

এছাড়া সম্প্রতি বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায় ও যুগ্ম-সচিব আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান অভিযোগটি পরীক্ষার জন্য বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তের মহাপরিচালক ব্রি. জে. (অব.) এম. এইচ. সালাহউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা অর্জনের আলোকে উৎসব ও জাতীয় বিদ্যুৎ সপ্তাহ ২০১৩ পালন উপলক্ষে মোট ১০ কোটি টাকা চাঁদা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে বিপিডিবি, পিজিসিবি, ডেসকো, ডিপিডিসি, ইজিসিবি, এসডব্লিউপিজিসিও, এনডব্লিউপিডিসিও, এপিএসসিএল, আরপিসিএল-এর কাছ থেকে চার কোটি এবং সামিত গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, এস. আলম গ্রুপ ইত্যাদির কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। কর্মসূচি পালনে মোট তিন থেকে চার কোটি টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা বিদ্যুৎ সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব পাচারের মাধ্যমে আত্মসাত করেন। চাঁদা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের কাজে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ওই তিন কর্মকর্তা ক্ষমতা বলে বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানির চেয়ারম্যান। অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়ে তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির আখড়া। বিদ্যুৎ সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব মাসে দুই থেকে তিনবার বিদেশ ভ্রমণ করেন। মূলত অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করতে তারা ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন।

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব মো: সাজেদুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দীপন চাকমাসহ আরো কয়েক কর্মকর্তা পুরাতন ওয়ালকে নতুনভাবে নির্মান করতে হবে দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্নসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।এসব বিষয়ও তদন্তে নেমেছে দুদক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে জেঁকে বসেন কিছু দাপুটে আমলা। তারা নিজ দফতরের বাইরেও অন্যান্য দফতরে প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, সরকারি বাসা বরাদ্দ, প্লট বরাদ্দ, সরকারি ক্রয়, সরবরাহ, লিজ প্রদানের তদবির করে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। কোনো আমলার বিরুদ্ধে জমি দখলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করার গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া সার্টিফিকেট জাল করে চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভুয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের মুখপাত্র প্রনব কুমার ভট্টাচার্য এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, সম্প্রতি আদালত কর্তৃক দুদকের সংশোধিত আইনের  ধারাটি বাতিলের ফলে এ সংস্থাটিতে গতিশীলতা ফিরে এসেছে। আইনের ধারাটি বাতিল হওয়ায় সচিব থেকে শুরু করে যে কোনো পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুসন্ধান ও তদন্তের আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে বলেও জানান তিনি ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ