সঙ্কটাবস্থায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি ,ঢাকাঃ বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্র কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হলেও গত কয়েক সপ্তাহে তা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের পশ্চিমা মিত্রদের প্রত্যাশা ছিল, ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের সূত্র ধরে সহিংস বিক্ষোভ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যাখ্যান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণে সে আশা ভেস্তে গেছে। সোমবার দ্য কোরিয়া হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনের শুরুতে এসব কথা বলা হয়েছে।
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র সঙ্কটাবস্থায়’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি লিখেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কোঅর্ডিনেটর চার্লিজ টেনক। প্রতিবেদনটি মতামত বিভাগে ছাপা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি দেখুন-Bangladesh’s democracy stands at a crossroads (http://www.koreaherald.com/view.php?ud=20140210001477)
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্রকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভেবেছিল, দরিদ্রতা, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য যথেষ্ট প্রজ্ঞা রাখে। ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। দলটির সেক্যুলার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রোথিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটা স্থিতিশীল ও দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির সময় পার করেছে।
তারপরও দেশে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, দৃশ্যত এই অবস্থার অন্তরালে দুঃখজনক বিভাজন রয়েছে। প্রকাশিত দীর্ঘ প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচারের প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জামায়াত ও হেফাজতের সমালোচনা করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রসঙ্গটি টেনে আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুই পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে এগিয়ে আসতে হবে আওয়ামী লীগকেই, যেমন বিএনপি নেতারা অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে হবে, নতুবা তাদের মুক্তি দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে, যে নির্বাচনে থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী পর্যবেক্ষক দল।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির উচিত জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলা। যারা শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র চায়, বিএনপি তাদের সঙ্গে সবসময় ঘনিষ্ঠ ছিল না। মূলত, বিএনপি ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আগ্রহী একটি দল এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগটা (এফডিআই) এখন বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি, সহিংসতার কারণে যা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তি ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখাও এখন বিএনপির জন্য প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন সঙ্কটকালে। পশ্চিমারা হোক আর দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশ হোক বাংলাদেশের ভুল পথে যাত্রা কেউই চায় না।