আলু এখন কৃষকের বোঝা

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  আলু নিয়ে সারা দেশেই কৃষকের হাহাকার চলছে। ক্ষেত, মাঠ, উঠান, হাট—সবখানে আলুর ছড়াছড়ি। দাম না পাওয়ায় সেই আলুই এখন কৃষকের বোছা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হতাশাগ্রস্থ কৃষক তাই রাস্তায় কিংবা নদীতে আলু ফেলে প্রতিবাদ জনাচ্ছেন। দেশে যেখানে বছরে গড়ে ৮০ লাখ টনের বেশি আলু উৎপাদন হচ্ছে, সেখানে রফতানি হচ্ছে বড়জোর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন।

আলু রফতানি বাড়াতে পারলে কৃষকের এ হাহাকার কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। এর সঙ্গে আবার যোগ হয় আগের বছরের উদ্বৃত্ত আলু। ফলে প্রতিবছর অন্তত ১৬ লাখ টন আলু রফতানি করা সম্ভব। এ বছর দেশে চার লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৮৬ লাখ টনেরও বেশি। এখনও অনেক স্থানে আলু তোলা হচ্ছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থ-বছরে দেশে আলু রফতানি থেকে আয় হয় ছয় লাখ ৮৬ হজার ৮৯২ ডলার। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫১ ডলারে। তবে এ যাবৎ সর্বোচ্চ এক কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৪ ডলারের আলু রফতানি হয় ২০১০-১১ অর্থবছরে। পরের বছর রফতানি কমে দাঁড়ায় ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬১০ ডলারে। গত অর্থবছরে রফতানি আবার বেড়ে হয়েছে এক কোটি নয় লাখ ৩০ হাজার ৬৬ ডলারে। বর্তমানে ২৭টি দেশে আলু রফতানি হয়। যদিও গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে আলু রফতানি হয়েছে ১৮টি দেশে।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বলেছেন, সরকারের প্রণোদনায় বেসরকারি উদ্যোগে ৭০০ কনটেইনার আলু রাশিয়ায় যাচ্ছে। দিনে দিনে রফতানি বাড়ছে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার আলু চাষি আল ইসলাম বেপারি বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। কিন্তু বাজারে আলুর দাম না পাওয়ায় অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে তাকে।অতীতে বিদেশে রফতানির লক্ষ্যে এ এলাকায় আলু কিনতে রফতানিকারকেরা আসলেও এবার সেরকম দেখা যাচ্ছে না ।

তিনি আরো বলেন, রফতানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা রফতানির সময় বন্দরকেন্দ্রীক কিছু সমস্যায় পড়েন বলে জানায় । তারা জানান, বন্দরে ট্রাক আটকে থাকায় অনেক সময়ই আলু পড়ে থাকে দু-তিন দিন। এতে অনেক সময় আলু নষ্টও হয়। একারনে খুবই হতাশায় রয়েছে মুষ্সিগঞ্জের আলু চাষি।

রফতানিকারকদের মতে, মান ভালো হওয়ার পরও প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আলু রফতানিতে পেরে উঠছেন না তারা। কারণ, ভারত সরকার এ ক্ষেত্রে বেশি নগদ সহায়তা দেওয়ায় অনেক কম মূল্যে সে দেশের রফতানিকারকেরা আলু রফতানি করতে পারেন। আবার আলু রফতানির জন্য নতুন বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে ভারতীয় দূতাবাসগুলো। কিন্তু সে তুলনায় দেশের রফতানিকারকেরা একেবারেই নগন্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।

ইপিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছরে শুধু মালয়েশিয়ায় ৪৭ লাখ ৩৬ হাজার ডলারের আলু রফতানি হয়েছে। আর সিঙ্গাপুরে হয়েছে ২৬ লাখ ২৭ হাজার ডলারের আলু। দেশের মোট আলু রফতানির এক-তৃতীয়াংশই যায় এ দুটি দেশে।

জানতে চাইলে ইপিবি’র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, দেশে এবার রেকর্ড পরিমান আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুবিধা না পাওয়ায় এবং নতুন বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় রফতানিকারকেরা আলু রফতানির আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই এ বিষয়ে উর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ