২০ দেশে বিশেষ প্রতিনিধি দল পাঠাবে সরকার

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়াতে চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার ২০টি দেশে উচ্চপর্যায়ের বিশেষ প্রতিনিধি দল পাঠাবে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিবের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলটি চলতি বছরেই এ মিশন শেষ করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য ও ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। এসব পণ্যের বাজার তৈরিসহ আরো নতুন পণ্য দেশগুলোয় রফতানি করার জন্য বাণিজ্য প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। ওইসব দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করবে এ বাণিজ্য মিশন।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের ১২টি দেশ— সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, লেবানন, ইরান, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, জর্ডান, ওমান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে বছরে ৬০-৭০ কোটি ডলারের বাংলাদেশের তৈরি পাট, পাটজাত পণ্য, চামড়া, ওষুধ, সবজিসহ ভোগ্যপণ্য রফতানি হয়। এসব দেশে জনশক্তি রফতানি হলেও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয়া হয়নি। ফলে রফতানি এখনো আশাব্যঞ্জক নয়।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে মাত্র ৩০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এ অঞ্চলের রফতানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার রফতানি করা সম্ভব।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় অর্ধকোটি বাংলাদেশী আভিবাসী রয়েছে। এছাড়া কয়েক কোটি পাকিস্তানি ও ভারতীয় অভিবাসী আছে।  সব কমিউনিটির চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রফতানি করতে সক্ষম বাংলাদেশ। ব্যবসায়ীরা মনোযোগী হলে এ অঞ্চলে বাণিজ্য কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশী পণ্যের অন্যতম বাজার এখন পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার। এসব দেশে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোয় বাণিজ্য মিসন পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ অঞ্চলে বছরে ৪০-৫০ কোটি ডলারের বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হয়। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ জোরালো হলে বছরে বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য রফতানি সম্ভব।

এদিকে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া, মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, সুদান ও তিউনিসিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এসব দেশ থেকে মূলত শিল্পের কাঁচামাল ও সার আমদানি হয়। তবে দেশগুলোয় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রফতানি করা সম্ভব। এছাড়া আফ্রিকার ৪৬টি দেশে বছরে ২০ কোটি ডলারের বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, একটু মনোযোগী হলেই উত্তর আফ্রিকার ছয়টি দেশেই এর চেয়ে বেশি রফতানি সম্ভব। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয়ও বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা ও সম্ভাবনা বাড়ছে। তৈরি পোশাক ও ওষুধ রফতানির মাধ্যমে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, নতুন রফতানি বাজার তৈরির জন্য গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও রাশিয়ান ফেডারেশনভুক্ত দেশগুলোয় মিশন পাঠানো হয়েছিল। এরই মধ্যে এসব মিশনের ফল আসা শুরু হয়েছে। চলতি বছর বিশ্বের চারটি অঞ্চলে মিশন পাঠানো হবে। এর মধ্যে অন্যতম পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য। গত বছর দক্ষিণ আমেরিকার চিলি, ব্রাজিল ও কলম্বিয়ায় মিশন পাঠানো হয়েছিল। এসব দেশ বাংলাদেশী পণ্য নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বছর দক্ষিণ আমেরিকার আরো কয়েকটি দেশে প্রতিনিধি পাঠানো হবে। এখনো দেশ ও সময় ঠিক হয়নি। তবে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ