অজানা গন্তব্যের পথে হাটছে বাংলাদেশ

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দেশটির গত দু’দশকের অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অর্জনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে এক অজানা গন্তব্যের পথে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশের ওপর শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এ শুনানি হয়।

দু’ পর্বে শুনানি হয়। প্রথম পর্বে প্যানেল সদস্য ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক এসোসিয়েট ডেপুটি আন্ডারসেক্রেটারি এরিক আর বিয়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিষয়ক বাণিজ্য সহকারী লুইস কারেশ। এছাড়া শুনানিতে অংশ নেন সিনেটর ডারবিন।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন  ছিল মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ, বিতর্কিত। এখানে গণতন্ত্র ও সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যতদ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন প্রয়োজন বলেও শুনানিতে বলা হয়।

পাঁচ ইস্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে শুনানি। এগুলো হলো: একটি নতুন নির্বাচন, জিএসপি প্রসঙ্গ, বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্রামীণ ব্যাংক ও ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস।

সিনেটর মেনেন্দেজের সভাপতিত্বে পররাষ্ট্র বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটিতে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয় । এতে প্যানেল সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। এতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নতুন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতাপূর্ণ সংলাপ আয়োজনে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে আরও বেশি চাপ দিতে ওবামা প্রশাসনকে আহ্বান জানায় সিনেট।

জিএসপি সুবিধা প্রসঙ্গে বলা হয়, জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে বাংলাদেশকে যেসব শর্ত পূরণ করতে দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে কিছুটা অর্জিত হয়েছে। তবে শ্রমিকের অবস্থা উন্নয়নে প্রতিশ্রুতির অনেকটাই এখনও পূরণ হয় নি।

সিনেটর ডারবিন বলেন, আমরা জানি এ সরকার মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে কি করেছে। এটা যে অন্যায় সেটা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝানোর জন্য আমরা কি করতে পারি? এটা তার দেশের জন্য ভুল, ওই মানুষটির প্রতি অন্যায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার পারস্পরিক সুসম্পর্কের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

শুনানি প্রসঙ্গে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, বাংলাদেশ একটি সঙ্কটজনক অবস্থানে। বাংলাদেশ যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস।

নিশা দেশাই তার শুনানিতে বলেন, ৫ই জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা ছিল মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। এতে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের একটি অংশ নেয় নি। ফলে জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বাকিরা নামমাত্র বিরোধিতা মোকাবিলা করেছেন। এ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিশ্বাসযোগ্য প্রকাশ ঘটেনি। এতে বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

নিশা দেশাই বলেন, নির্বাচনের পর পরই আমরা কড়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিই যে, এ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, এতে জনগণের মতের কোন প্রতিফলন ঘটেনি। একই সঙ্গে নতুন একটি নির্বাচনের জন্য সংলাপের আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে সমপ্রতি বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও গুমের যেসব রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে এসব নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমরা সহিংসতার নিন্দা জানাই। গণতন্ত্রে এটা কোন কৌশল হতে পারে না।

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলবিহীন ৫ জানুয়রির নির্বাচন এবং নির্বাচনোত্তর চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ‘সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশনস’ আয়োজিত বাংলাদেশ বিষয়ক এক শুনানিতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ফরেন রিলেশনস কমিটির সদস্যগণ তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

সিনেট শুনানির দ্বিতীয় প্যানেলে আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়াম মি. স্কট নোভা, বাংলাদেশ শ্রমিক নিরাপত্তা জোট-এর বোর্ড অব ডিরেক্টর্স-এর চেয়ারম্যান এলেন ট্যাশার এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ