তৈরি পোশাকশিল্পে পকেট ভরেছে মালিকের

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর না করলেও সরকারের দেওয়া সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেওয়া শেষ করেছেন পোশাক শিল্পমালিকেরা।মজুরি বাড়ানোর শর্ত হিসাবে রফতানি বাণিজ্যে সরকারের কাছ থেকে বেশ কিছু সুবিধা আদায় করেছিল মালিকেরা। তবে এসব সুবিধা দেওয়ার প্রধান যে শর্ত ছিল তা হলো নতুন মজুরি কাঠামো শতভাগ বাস্তবায়ন। কিন্তু নূন্যতম মজুরি শতভাগ কারখানায় বাস্তবায়ন না করলেও সুবিধা নিয়েছেন সব ধরনের পোশাকশিল্প মালিকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র কাছেও মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের সঠিক হিসাব নেই। তবে মজুরি বাড়ানোর সময় বিজিএমইএ’র নেতৃত্বে পোশাকশিল্প মালিকেরা সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে। কিন্তু এখন এ সংগঠন বলছে, মালিকদের সক্ষমতা না থাকলে তারা চাপ প্রয়োগ করতে পারে না।

বিজিএমইএ বলছে, ঢাকা ও এর আশপাশের ৩৮ শতাংশ কারখানা এখনো নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর করেনি। আর চট্টগ্রামে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি দেয়নি ৬০ শতাংশ কারখানা।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘এর বাইরেও অনেক কারখানা আছে। ফলে এটি প্রকৃত চিত্র নয়।’

তিনি বলেন, ‘৩৮ শতাংশ কারখানার মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতা করে আগের চেয়ে ৫০০, ৭০০ ও এক হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

তবে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়ন করেনি এমন কারখানার সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বেশি মজুরি দিতে মালিকেরা গড়িমসি করছেন বলে শ্রমিকনেতাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কারখানা নতুন মজুরি দিয়েছে। অনেক মালিক দিচ্ছি, দেব বলে শেষ পর্যন্ত জানুয়ারি মাসে শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি দেননি। আবার খরচ কমানোর অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই ও নিয়োগ বন্ধ রেখে বর্ধিত মজুরির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন বন্ধ করার কৌশল নিয়েছেন কিছু মালিক।

নতুন মজুরি পুরোপুরি বাস্তবায়নে বিজিএমইএ নিজেদের সদস্যদের কোনো চাপ দেয়নি। যদিও ৭৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতির পরিসংখ্যান দেখিয়ে কারখানার মালিকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নিয়েছে সংগঠনটি। জানা যায়, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে আইনি বাধ্যবাধকতায় বড় ধরনের ছাড় ও ১ শতাংশ কম সুদহারে রফতানি উন্নয়ন সহায়তা ঋণের (ইডিএফ) অর্থ নিচ্ছেন পোশাক মালিকেরা। এ ছাড়া আরেক দাবি, পোশাকশিল্পের উৎসে কর হার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

নিম্নতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তদারকি না থাকার কারণেই শ্রমিকেরা নতুন মজুরিকাঠামোর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তদারকি ছাড়া শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব না।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘মজুরিকাঠামো পুরোপুরি বাস্তবায়নে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে পর্যবেক্ষণ কমিটি করা দরকার।’

তৈরিপোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো গত ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। জানুয়ারি থেকেই বর্ধিত মজুরি পাওয়ার কথা। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি এখন পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। ৫ ডিসেম্বর নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেট প্রকাশিত হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ