সংশোধন কেন্দ্র যেন নির্যাতন সেল
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর সংশোধন কেন্দ্র নিয়ে নানা অভিযোগ। সংশধোন কেন্দ্রটিকে অনেকেই এখন নির্যাতন কেন্দ্র বলছেন। গত মঙ্গলবার রাতে রুমের লাইট জানালার গ্লাস ভেঙে নিজেদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত করার বিষয়টি সবাইকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সামনে বেশকিছু সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীর ভিড়। সবাই সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক এসএম আনোয়ারুল করিমের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এসেছেন। কিন্তু তিনি রুমে নেই। তার রুমের এক কর্মচারী বলেন স্যার আহত ছেলেদের পরিদর্শন করতে গেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা তার রুমের সামনে অপেক্ষা করেও টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রর তত্ত্বাবধায়ক এসএম আনোয়ারুল করিমের দেখা পাওয়া যায়নি।পরে তার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সেটি রিসিভ করেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেন্দ্রে প্রায় দুইশ জন থাকার জায়গা রয়েছে কিন্তু সেখানে রয়েছে প্রায় ৩০৯ জন। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৮ বছরের কম। এরা সাবাই কোনো না কোনো অপরাধ করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে এসেছেন। প্রতিদিন তাদের প্রত্যেকের জন্য ১৩৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে।কিন্তু তাদের মাথাপিছু ৫০ টাকার খবার দেওয়া হয়। প্রতিদিন ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, খিচুরি ও দুধ দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের শুধু আলুভাজি ও ডাল খেতে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রের অভিভাবক জানান, গত ১৯ মাস আগে আমার ছেলেকে শ্যামপুর আইজি গেটের সামনে থেকে পুলিশ একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। আমার ছেলের সঙ্গে যতবার দেখা করতে এসছি সে ততবার খাবারের ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এখন আমার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না। আমার ছেলেকে নিয়ে বেশ শঙ্কায় আছি।
টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা করার এক পর্যায়ে টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইসমাঈল হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। এরপর আমি ঘটনাস্থলে এসে আহত ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। আহতরা আমাকে জানিয়েছেন, অনেকদিন যাবৎ তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। তাদের অনেকদিন আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যায়নি। এ কারণে তারা বেশ হতাশায় ভুগত। এছাড়া পিটি করানোর সময় পিটি গ্রাউন্ডের টিচাররা একটু ভুল করলে তাদের বেত্রাঘাত করত। এ কারণে তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের এক কর্মচারী জানান, আমাদের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে গত সোমবার হানিফ নামের একটি ছেলেকে হাজিরা দিতে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে দুটি ঠান্ডার সিরাপ কিনে দেয়। পরে হানিফ একত্রে দুটি সিরাপ খেয়ে ফেলে। এতে কর্তব্যরত প্রশিক্ষক তাকে কয়েকটি চড় মারে এবং তার পরিবারের লোকজনদেরকে অপমান করে। এ কারণে তারা সবাই মিলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
টঙ্গী ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ব্রাদার সাখাওয়াত হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার রাতে টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ২০ ছাত্র নিজের শরীর জখম করে হাসপাতালে আসে। তাদের সঙ্গে সেখানকার কর্তব্যরত কর্মকর্তা ছিলেন। আহতদের শরীরের এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত ক্ষত ছিল। আমি সারারাত ধরে ক্ষত সেলাই করেছি। তবে সেলাই করার সময় তাদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।
আহতরা হলেন, হানিফ (১৭), রাজিব (১৬), শাকিল (১৫), শান্ত (১৫), সাহাবউদ্দিন (১৫),বাপ্পি (১৬), সোহেল (১৮), আলমগীর হোসেন (১৮), রাশেদ (১৮), রফিকুল ইসলাম (১৬), মোহাম্মদ রিপন (১৬), আল আমিন (১৮), মোহাম্মদ হোসেন (১৭), তুহিন (১৬), আসলাম (১৮), খোকন (১৬), সাগর (১৭), সোহেল (১৬), সজিব (১৫) ও সাগর (১৫)।
উল্লেখ্য গত, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ২০ ছাত্র নিজের শরীর কেটে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ ঘটনাটি মিডিয়ায় প্রকাশ পেলে হাইকোর্ট সমাজ কল্যান সচিব, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, গাজীপুরের পুলিশ সুপার ও টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ককে দুই সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য রুল জারি করেন।