এরশাদের আর্তনাদ

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  একদিন যারা এইচ এম এরশাদের নির্দেশ  পালন করতে পারলে নিজকে ধন্য মনে করতেন। সেটা রাষ্ট্রীয় কিংবা ব্যক্তিগত ফরমায়েশ হোক। তারাই অনেকে এখন আর আগের মতো এরশাদের কথা শুনছেন না। তাদের দলে আছেন ঘরের ও দলের লোক। জীবনের শেষ প্রান্তে তাকে কেউ ছেড়ে কিংবা কেউ এড়িয়ে যায়। কেউ তাকে জিম্মি করে নিজেদের আখের গোছাতে চায়। কেউ দেখায় মামলার ভয় আবার কেউ করে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। ইচ্ছ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের বিশ্বস্তরাও পাশে দাঁড়াতে পারছে না। তাই অসহায় এশাদের আর্তনাদ; তোমাদের মধ্যে যারা আমার আদেশ অমান্য করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছো তারা আমার প্রিয়পাত্র নয়। এখনো সময় আছে ফিরে এসো। যদি  না এসো তাহলে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

বুধবার গুলশানের ইমানুয়েল সেন্টারে আয়োজিত তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এরশাদ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের উদ্দেশে আক্ষেপ করে এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, ওই সভায় এরশাদসহ তিনজন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বাকি ৩০ জন এমপি আসেননি। আসেননি পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। এমনকি রওশন এরশাদও আসেননি। অনুপস্থিত ছিলেন রওশনের অনুসারী অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্যও।

সূত্র জানায়, নির্বাচন বর্জন এরশাদের  জন্য বড় বিপদ ডেকে আনে। এখন তিনি নিজ দলেও ক্ষমতাহীন। সরকারের পরিকল্পনায় রওশন এরশাদকে বানানো হয় বিরোধীদলীয় নেতা।  রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা বানানোর পর দলীয়  মন্ত্রী ও এমপিরা এখন রওশনের পাশে। সংসদীয় দলের বিগত কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে রওশনের নেতৃত্বে। এরশাদকে ছাড়াই রওশনের নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে ফুলও দেয়া হয়েছে। রওশনের প্ররোচনাতেই বুধবারের সভায় অনেক নেতা অনুপস্থিত ছিলেন। এখন দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এরশাদকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। ঘরে বাইরে তিনি চাপের মধ্যে আছেন।

ওই সভায় এরশাদ বলেন,  সবাইকে সভায় আসার আহ্বান করেছিলাম।  অনেককেই এসেছেন।আসেননি অনেক অধিকাংশ সংসদ সদস্য। তারা কি জাতীয় পার্টির এমপি নন? তিনি অনুপস্থিত এমপিদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এখনো জাতীয় পার্টি ভাঙ্গার অপচেষ্টা চলছে। এই অপতৎপরতা রুখতে হবে। শেষবারের জন্য বলছি ফিরে এসো। যদি না আসো তাহলে রাজনীতিতে স্থান হবে না।

তিনি বলেন, ভয় ও হতাশার কোনো কারণ নেই। যারা আমার আদেশ-নির্দেশ উপেক্ষা করেছো, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তাদের কথা আমার মনে আছে। তোমরাও মনে রাখবে।

তবে নির্বাচন বর্জনের কথা গতকালও দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। কেন এরশাদ হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তা এখনও এক রহস্যই বটে। এদিন তিনি নিজেও এব্যাপারে খোলাসা করে কিছু বলেননি। তিনি  বলেন, অনেক কথা বলার ছিল, বলতে পারছি না। কেন নির্বাচনে যেতে চাইনি, কেন যাইনি তা স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। পরে একদিন বলবো।

এরশাদ বলেন, ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে সঙ্কট আমার পিছু ছাড়েনি। তবুও আঁতাত করে নির্বাচন করিনি।  কারাগারে  থেকে ৩৫টি আসন পেয়েছিলাম। সঙ্কটে পথ চলার অভ্যাস আমার আছে। কখনই জাতীয় পার্টির যাত্রা থেমে থাকেনি।

তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলো। নির্বাচন নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না।  বহুদিন রাজনীতির বাইরে ছিলাম। বিশেষ কারণে তোমাদের সামনে আসতে পারিনি।  আজকে ডেকেছি। তোমরা আমার সঙ্গে আছো কিনা। এসেছো  দেখে খুশি হলাম। খুব খুশি হলাম।

মামলার  প্রসঙ্গ টেনে এরশাদ বলেন, ৯০ সাল থেকে মামলায় ঝুলে আছি। রায় দেয়ার দিনে বিচারক বদলানো হয়েছে। এরশাদ তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে বলেন, হতাশার কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রয়োজন হবে। জাতীয় পার্টি আছে, থাকবে। আগামীতে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাবো। আমার বুকের রক্ত দিয়ে লালন করেছি এই দল। সামান্য মোহের কারণে তোমরা বন্ধন ছিন্ন করো না। যারা বন্ধন ছিন্ন করেছো তাদের বলবো ফিরে আস। তা না হলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজি সাইফুদ্দিন আহমদ মিলন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন  এরশাদের আহ্বানে সবাই অনুষ্ঠানে আসতে চায়। অনেকে এসেছে। আবার দলের এমপিসহ অনেকে আসতে পারেনি। আসলে দীঘদিনের অমূলক সন্দেহে এবং দিধা সংকোচের কারণে তারা আসতে পারেনি। তাছাড়া কর্মীদের তোপের মুখে পড়ার ভয়েও অনেকে আসেননি। আবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের খবরও অনেকে পায়নি।

এরশাদের আহ্বানে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো.মুজিবুল হক চুন্নু এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, বুধবার মন্ত্রণালয়ে মিটিং ছিল। এ কারণে অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। যে যাই বলুক এরশাদ আমার নেতা। তার প্রতি শ্রদ্ধা আনুগত্য সবই আছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ