অবৈধ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নির্ণয়ের উদ্যোগ

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  বাংলাদেশ সরকার দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার জেলায় মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেছেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো সেখানে স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা নিয়ে শিগগিরই এই জরিপ শুরু করবে।

কক্সবাজারে দু’টি শিবিরে থাকা প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাইরে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গাদের সঠিক কোন সংখ্যা বা তথ্য সরকারের কাছে নেই। স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হয়, অবৈধভাবে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবৈধ মাদক পাচারসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ করাসহ আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলা জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে, বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘ সময় ধরে এমন অভিযোগ করে আসছে।

এই জরিপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা এবং সঠিক সংখ্যা ও তথ্য জানা সম্ভব হবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন। তিনি বলেন, দু’টি শিবিরের বাইরে বাংলাদেশে মিয়ানমারের নাগরিক যারা আছে, তাদের সংখ্যা জানা এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ সরকার একটা জাতীয় কৌশল নিয়েছে । সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রশ্নপত্র তৈরি করে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করবে।

নব্বই-এর দশকের শুরুতেই মিয়ানমার থেকে আড়াই লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। সে সময় আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়েছিল। কিন্তু এখনও কক্সবাজারের কুতুপালং এবং নয়াপাড়া এলাকায় দু’টি শিবিরে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, এবং ২০০৫ সাল থেকে তাদের ফেরত নেওয়া বন্ধ রয়েছে।

এছাড়াও দুই দশক ধরেই অবৈধভাবে রোহিঙ্গারা এসেছে, যারা শরণার্থী শিবিরের বাইরে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও স্থানীয়ভাবে বলা হয়, দু’টি শিবিরের বাইরে অবৈধভাবে ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে এসেই স্থানীয়দের সাথে মিশে যায়। এদের চেহারা আমাদের মতই, সে কারণে আলাদা করা যায় না। তিনি বলেন, এরা মাদক পাচার, চুরি,ডাকাতিসহ সব ধরণের অপরাধে জড়িত থাকছে। এরা বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলার জন্য হুমকি।

কক্সবাজারের বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন অবৈধভাবে আসা এই রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর দাবিতে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের একজন সংগঠক নূর মোহাম্মদ শিকদার বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তেমন লাভ হয় না। অনেক জায়গায় এখন রোহিঙ্গারাই প্রভাবশালী হয়ে উঠছে বলে তার ধারণা।

স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন, অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে যেভাবে অবস্থান করে নিচ্ছে, তাতে তাদেরকে চিহ্নিত করাও সহজ বিষয় নয়।

তবে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেছেন, জরিপ কাজে স্থানীয় প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্থানীয় লোকদের সম্পৃক্ত করা হবে। আর এই জরিপের পর সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করবে।

শহিদুল হক বলেন, সমস্যা যেহেতু মিয়ানমারের দিক থেকে হয়েছে, তাই তাদের এই নাগরিকরা যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাদের ফেরত নিতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করে এই জরিপের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, জরিপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও সহযোগিতা নেবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ