ভাষার মাসে ফুটবল বিপ্লব হল না শেখ জামালের
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ শেখ জামাল ১ (৩) : কলকাতা মোহামেডান ১ (৪)
ভাষার মাসে শেখ জামাল অধিনায়ক মামুনুল প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আইএফএ শিল্ড জিতলে শিরোপাটা উৎসর্গ করবেন ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি। সেই চ্যালেঞ্জে জেতা হল না শেখ জামালের। টাইব্রেকারে সাডেন ডেথে মোহামেডানের কাছে ৪-৩ ব্যবধানে হেরে যায় তারা। যুবভারতীতে অনুষ্ঠিত শনিবারের ফাইনালে কলকাতা মোহামেডানের বিপক্ষে পাল্লা দিয়েই খেলে ম্যাচটা ১-১ গোলে ড্র রাখলেও শেষ হাসি হাসা হল না তাদের। তাই হল না ভাষার মাসে ফুটবল বিপ্লব।
১৯৯৫ সালে প্রথম বাংলাদেশি ক্লাব হিসেবে আইএফএ শিল্ড ফাইনালে পৌঁছেছিল ঢাকা মোহামেডান। সেবার ইস্ট বেঙ্গলের সাথে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ গোলে ড্র’র টাইব্রেকারে হেরেছিল মোহামেডান। এবারও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ ড্র’র পর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম দুটো শট দুই দল জালে জড়ালেও তৃতীয় শটটা মিস করেন শেখ জামালের আমিশু। পরের শটটা পোস্টে মেরে বসেন মোহামেডানের জসিমা। যুবভারতীতে তখন তীব্র উত্তেজনা। শেষ শটের আগে স্কোর ছিল ৩-৩। মোহামেডানের রহিম নবির পঞ্চম শটটা ঠেকিয়ে দেন জিয়া। শেষ শটটা জালে জড়ালেই প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে শিরোপা জিতত শেখ জামাল। কিন্তু পঞ্চম শটটা ঠেকিয়ে দেন মোহামেডান গোলরক্ষক। খেলা গড়ায় সাডেন ডেথে। দিদারুলের সেই শট ঠেকিয়ে ১৯৭১ সালের পর মোহামেডানকে এই টুর্নামেন্টের শিরোপা এনে দেন নাসিম। এবারও তাই মোহামেডানের মত কাঁদতে হল শেখ জামালকে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ১-১ সমতা ছিল ফাইনালে। তাই খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৮২ মিনিটে দুদলের দুজন লালকার্ড দেখায় খেলাটা হয়ে পড়ে টেকনিক্যাল। এজন্য প্রথমার্ধেই দলের এক নম্বর গোলরক্ষক জিয়াউর রহমানকে বদলি হিসেবে নামান শেখ জামাল কোচ জোসেফ আপুচি। টাইব্রেকারের প্রস্তুতিতে মোহামেডানও গোলরক্ষক বদল করে নামান নাসিম আখতারকে। দুই গোলরক্ষকের মধ্যে টাইব্রেকারে নায়ক হলেন নাসিম।
খেলাটা দুই ক্লাবের হলেও যুবভারতীতে ছিল ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের আবহ। দুদেশের পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল পুরো গ্যালারি। টালিউড নায়িকা ঋতুপর্ণা সেন যেমন গলা ফাটিয়েছেন কলকাতা মোহামেডানের হয়ে তেমনি বাংলাদেশকে উৎসাহ যোগাতে উড়ে গিয়েছেন বিসিবি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান। আগে থেকেই ছিলেন আবার বাফুফে প্রেসিডেন্ট কাজি সালাউদ্দীন। আর শেখ জামালের সভাপতি মনজুর কাদেরসেহ দলের বড় একটা সমর্থক গোষ্ঠী তো ছিলেনই। ফাইনাল জিতলে প্রতিটি খেলোয়াড়কে ২৫ হাজার ডলার বোনাসের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন মনজুর কাদের। এটা শেখ জামালকে বাড়তি উৎসাহ যুগিয়েছে দূরন্ত ফুটবল খেলতে।
ছোট ছোট পাসে প্রথমার্ধে দূরন্ত ফুটবল খেলে কলকাতা মোহামেডানকে চাপে রেখেছিল শেখ জামাল। ২৭ মিনিটে সনি নর্দের দূরন্ত পাসে এগিয়েও গিয়েছিল তারা। তবে বিরতির ঠিক আগে সমতা ফেরায় মোহামেডান। জসিমারের পাসে ফাঁকায় থাকা মেহরাজ সমতা ফেরান মোহামেডানের হয়ে।
৮২ মিনিটে শেখ জামালের সনি নর্দে এবং মোহামেডানের লুসিয়ানোকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। নর্দের হাতের আঘাতে লুসিয়ানো পড়ে গিয়েছিলেন মাঠে। লুসিয়ানো তাকে চেপে ধরার চেষ্টা করলে নর্দের হাতের আঘাতে মাটিতে পড়ে যান লুসিয়ানো। তবে তার হাতটা লুসিয়ানোর শরীরে লেগেছিল কিনা টিভি রিপ্লেতে সন্দেহই থেকে গেছে এ নিয়ে। এমনকি রেফারিও বুঝতে পারেন অভিনয় করছেন লুসিয়ানো। তাই নর্দেকে লালকার্ড দেখানোর পর লুসিয়ানোকেও হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। আগে একটা হলুদ কার্ড থাকায় অটোমেটিক লালকার্ডে মাঠ ছাড়তে হয় লুসিয়ানোকে। নাটকীয় এমন সিদ্ধান্তে দশ জনের দলে পরিণত হয় দুদল।
১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পরও আক্রমণের ধার বেড়ে যায় শেখ জামালের। ৮৪ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি অধিনায়ক মামুনুল। আর ৮৯ মিনিটে এমেকার একটি শট অল্পের জন্য যায় পোস্টের উপর দিয়ে। অতিরক্ত সময়ে খেলা শেষের দুই মিনিট আগে আমিসুরের একটা শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় অল্পের জন্য।
অতিরিক্ত সময়ে বিদেশি খেলোয়াড় বদলি হিসেবে নামানো নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল যথেষ্ট। রেফারির দাবি ছিল তিনজন বিদেশি খেলানোয় আর কোন বিদেশি নামাতে পারবে না শেখ জামাল। তবে তাদের দাবি ছিল সনি নর্দে লালকার্ড দেখায় একজনকে নামানোই যায়। শেষ পর্যন্ত রুল বুক দেখে এমেকার বদলে আরেক বিদেশিকে নামানোর অনুমতি দেয় কতৃপক্ষ।
১১৮তম আইএফএ শিল্ড টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বে মোহনবাগান ও সেমিফাইনালে ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়েছিল শেখ জামাল। মোহামেডানের কাছে ১-২ গোলে তারা হেরেছিল গ্রুপপর্বে। সেই প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি ম্যাচটা জিতলে শেখ জামাল পূরণ করত চক্রপূরণ। একই টুর্নামেন্টে ভারতের ঐতিহ্যবাহি তিন দল মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল,মোহামেডানকে হারানোটা তেমনই ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত হল না সেই স্বপ্ন পূরণ।