জিএসপি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া ১৬ শর্ত পূরণেও পাওয়া যাবে না বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার (জিএসপি) সুবিধা। বাংলাদেশে বিরাজমান গণতন্ত্র, মানবাধিকার লংঘন, সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিই এর প্রধান অন্তরায়। আর এ নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন সরকার। মার্কিন সিনেটের শুনানি, ড্যান ডব্লিউ মজীনা ও বাণিজ্যমন্ত্রী’র তৎপরতা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই জিএসপি সুবিধা পাওয়ার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পোশাক-শিল্প কারখানার মালিকদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেণ। ব্যাস্ত সময় পার করার পর গত বৃহস্পতিবার তোফায়েল আহমেদ হতাশা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ড. ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শর্ত হিসেবে আনা হলে জিএসপি সুবিধা হয়তো পাওয় যাবে না।’ বাণিজ্যমন্ত্রী পূর্বের দেওয়া ১৬ শর্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।

অপরদিকে গত মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ’ নিয়ে মার্কিন সিনেটে শুনানিতে বাংলাদেশে বিরাজমান গণতন্ত্র, মানবাধিকার লংঘন বিশেষ করে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংলাপ আয়োজনে উদ্যোগ না নেওয়া, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ উঠে আসে। আলোচনায় উঠে আসে জিএসপি প্রসঙ্গও। সরকারে পাশাপাশি দেশের বিশিষ্টজনরাও মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের বেধে দেওয়া ১৬ শর্ত পূরণেই মিলবে না জিএসপি সুবিধা। ১৬ শর্তের সঙ্গে এখন নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

গত সপ্তাহে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজীনা সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে সংলাপ আয়োজনের তাগিদ দেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান। ড্যান ডাব্লিউ মজীনা সাংবাদিকদের জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬ জানুয়ারির অবস্থানেই আছে।

জিএসপি সুবিধা পাওয়া নিয়ে তোফায়েল আহমেদ শনিবার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া ১৬ শর্তের ১৩ শর্তই পূরণ করা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, বাকি ৩টি শর্ত পূরণে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে এই ৩ শর্তও আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো। মর্কিন সিনেট অধিবেশনে বাংলাদেশ শুনানিতে জিএসপি সুবিধা নিয়ে আলোচনায় ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ অনাকাঙ্খিত বলেও মন্তব্য করেণ তিনি।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের দেশ আমাদের আইন অনুযায়ী চলবে। কোনো প্রকার চাপের মধ্যে আমরা মাথানত করবো না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান এবিসি নিউজ বিডিকে শনিবার বলেন, গত বছর জিএসপি স্থগিতের সময় যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়েছিল।

তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সিনেট কমিটির শুনানিতেও শ্রম পরিস্থিতির পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কাজেই জিএসপি ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক যেসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে, তা দূর করতে হতে হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ