সরকারের ৩২ কোটি টাকা দিতে টালবাহানা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও সওজের পাওনা পরিশোধ করছে না মার্কেন্টাইল ব্যাংক। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চারলেন সড়ক প্রকল্পের দুই প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল এইচআরবিসি-ইন্ট্রাকো বিডি জেভিকে। ওই দুই অংশের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে (সওজ) মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার অ্যাডভান্স পেমেন্ট গ্যারান্টি (এপিজি) দাখিল করে। জালিয়াতির জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলেও এপিজির টাকা সওজকে বুঝিয়ে দিচ্ছে না মার্কেন্টাইল ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এজন্য বারবার নির্দেশনা দিলেও সওজের টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে ব্যাংকটি। সওজের তথ্যমতে, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের ডব্লিউআই-১ ও ডব্লিউআই-২ প্যাকেজের ঠিকাদার হিসেবে এইচআরবিসি-ইন্ট্রাকো বিডি জেভির সঙ্গে ২০১১ সালে ২৩ মার্চ চুক্তি করে সওজ। আর ২৯ মার্চ নোটিশ অব কমেন্স প্রদান করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোবিলাইজেশন অ্যাডভান্স গ্রহণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআরবিসি-ইন্ট্রাকো বিডি জেভি ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার এপিজি দাখিল করে। এক্ষেত্রে এর বিপরীতে ২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা মোবিলাইজেশন অ্যাডভান্স বাবদ গ্রহণ করে ইন্ট্রাকো বিডি।

সাধারণত প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারের মোবিলাইজেশন অ্যাডভান্স গ্রহণে নিরাপত্তা হিসেবে এপিজি প্রদান করে ব্যাংক। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এপিজি জমা রাখে বাস্তবায়নকারি কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তা ঠিকাদারকে ফেরত দেয়া হয়। তবে কোনো কারণে চুক্তি বাতিল হলে এপিজি নগদায়ন করে ঠিকাদারকে প্রদান করা অগ্রিম অর্থ ফেরত নেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, শর্ত ভঙ্গ করা ও দরপত্রে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় ২০১১ সালে ১৪ জুলাই জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চারলেন প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করে সওজ। হাইকোর্টে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর চূড়ান্তভাবে চুক্তি বাতিল করা হয়। এর পর এপিজির অর্থ বুঝিয়ে দিতে ১৯ অক্টোবর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিল শাখাকে চিঠি দেয় সওজ। কিন্তু এপিজির ৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেয়নি ব্যাংকটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরবিট্রেশনে অভিযোগ করে সওজ। আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর এপিজির বিপরীতে গ্রহণকৃত মোবিলাইজেশন অ্যাডভান্সের অর্থ চার মাসের মধ্যে ফেরত দিতে মার্কেন্টাইল ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। তবে এখনো অর্থ পরিশোধ করেনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক। বরং আরবিট্রেশন ট্রাইবুনালের নির্দেশের স্থিতিবস্থা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে ব্যাংকটি।

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে তা খারিজ করে দেয়। এর পর ২০১৩ সালের ৩ জুন, ২৩ জুন, ৭ জুলাই, ১ আগস্ট, ৮ সেপ্টেম্বর ও ৩১ অক্টোবর এপিজির অর্থ ফেরত চেয়ে চিঠি দেয় সওজ। অর্থ পরিশোধে মার্কেন্টাইল ব্যাংক গড়িমসি করায় বিষয়টি জানিয়ে ১৮ জুন, ৩০ জুলাই, ১ আগস্ট, ৮ ও ২২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন এবং ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে চিঠি দেয় সওজ। পাশাপাশি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসেও জানানো হয়। সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি মার্কেন্টাইল ব্যাংক আইনি ব্যাখ্যা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়। আজ কালের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠির জবাব দেবে বলে জানা গেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় সাত মাস পার হয়ে গেছে। এখন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের হিসাব জব্দ করে সরকারের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে।

এর আগে এপিজির অর্থ দ্রুত বুঝিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন শাখা থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংককে কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু অর্থ ফেরত দেয়নি মার্কেন্টাইল ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় যোগাযোগ করা হলে জানায়, প্রধান কার্যালয় নির্দেশ না দেয়ায় তারা অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসানুল হকের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জলিল চৌধুরী এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, আমরা এই বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। তারা আমাদের যে ভাবে বলবে সেভাবে পদক্ষেপ নিবো।

এদিকে এপিজির অর্থ বুঝে পেতে সওজ ব্যর্থ হওয়ার পর তৎপর হয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করে মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি চিঠি দেয়া হয়েছে। সড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব (আইন ও সংস্থা) মো. আব্দুর রৌফ খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক এপিজির অর্থ বুঝিয়ে দিতে মোটেও আন্তরিক নয়। অথচ গ্যারান্টি ক্লজ অনুযায়ী, চুক্তি বাতিলের লিখিত বিবৃতি দাখিল করা মাত্র এপিজির অর্থ বুঝিয়ে দিতে বাধ্য ব্যাংক। এক্ষেত্রে মার্কেন্টাইল ব্যাংক কোনো শর্ত আরোপ করতে পারে না। কারণ এপিজি মূলত শর্তহীন।’ সড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. আব্দুর রৌফ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আচরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে তারা এপিজির অর্থ বুঝিয়ে দিতে আগ্রহী নয়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। আশা করা যায়, অর্থ পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন গভর্নর।

প্রসঙ্গত, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চারলেন প্রকল্পের ডব্লিউআই-১ ও ডব্লিউআই-২ প্যাকেজ বর্তমানে বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ