সিলেটে বাড়ছে এইডস রোগী
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, সিলেটঃ প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে আশঙ্কাজনক হারে এইচআইভি (এইডস) আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ১০ বছরে এ অঞ্চলে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬০-এ। আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২২৮ জন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টরা এটাকে চরম বিপদসংকেত হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে তা মহামারীর আকার নিতে পারে। এ অবস্থায় বিমানবন্দর ও সীমান্ত চেকপোস্টে এইচআইভি পরীক্ষা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৯৮ সালে সিলেটে প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত ফেরত এক শ্রমিকের দেহে সন্ধান মেলে এইচআইভির। এইডস আক্রান্তদের ৯৮ শতাংশই অভিবাসী শ্রমিক।
এইডস নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘আশার আলো সোসাইটি’র এক জরিপে দেখা গেছে, সিলেটে ২০০৩ সালে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮ জন। চলতি বছর তা বেড়ে ৫৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ২২৮ জন। ছোট একটি অঞ্চলে এত বেশি মানুষের শরীরে এইডসের জীবাণু ধরা পড়াকে বিপদসংকেত হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আশার আলো সোসাইটির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী তাহমিনা বেগম জানান, প্রতি বছর সিলেটে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের দেহে এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়ছে।
সিলেটে যেসব শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যান তাদের এইডস সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় তারা সেখানে গিয়ে অবাধে মেলামেশা করার কারণে প্রবাসীদের মধ্যে এইডস ছড়িয়ে পড়ছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. শিব্বির আহমদ মনে করেন, ‘দেশের মানুষকে এইডস থেকে বাঁচাতে দেশে ফেরত সব প্রবাসীর বিমানবন্দর ও সীমান্তবর্তী চেকপোস্টে এইচআইভি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে একসময় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও পার্শ্ববর্তী ভারতের মতো আমাদের দেশেও এটি মহামারী আকার ধারণ করতে পারে।’
এদিকে বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফের উদ্যোগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মায়ের শরীর থেকে শিশুদের মধ্যে এইচআইভি ও জন্মগত সিফিলিস সংক্রামক প্রতিরোধ কার্যক্রম ‘পিএমটিসিটি’ নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। গত বছরের ১৯ আগস্ট শুরু হওয়া এ প্রকল্প দুই বছর মেয়াদি। ‘পিএমটিসিটি’ প্রকল্প চালু হওয়ার পর ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা গর্ভবতী মায়েদের বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনোজ্জির আলী বলেন, ‘এইডস আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েরা ‘পিএমটিসিটি’ প্রকল্পের আওতায় এসে আমাদের পরামর্শমতো চললে তাদের শিশুদের এইডস আক্রান্তের শঙ্কা ৯৮ শতাংশই থাকে না। ডাক্তারদের কথামতো চললে এইডস আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ খেলেও শিশুর এইডস হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না বলেও জানান বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক।