অনন্তর খোলা কলম
অবশেষে গণমাধ্যমের খবরই সত্যি হলো। অনন্তকে ‘তালাক’ দিয়ে মুম্বাই পাড়ি জমিয়েছেন বর্তমান সময়ের আলোচিত নায়িকা বর্ষা। মঙ্গলবার দুপুর থেকে এ তালাক কার্যকর হয়েছে। তবে তালাকের পর বর্ষা কিছু না বলে বিদেশে উড়াল দিলেও বিশাল এক চিঠিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন অনন্ত। চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
”গত কয়েকদিন ধরে আমার সকল সাংবাদিক ভাই ও বন্ধুদের সাথে আমি কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারিনি। এই কয়দিন যেসব ঘটনা ঘটে গেছে, তা শুধু আমি না, আমার জায়গায় আপনাদের হলেও একই অবস্থাই হতো। আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারিনি, এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
আজ আপনাদের সাথে এখানে সম্মিলিত হওয়ার একটাই কারণ, তা হলো আপনাদের সামনে আজ খোলামেলা কথা বলব। কারণ আপনাদের সাথে সবকিছু শেয়ার না করায় বিভিন্নজন নিজেদের ইচ্ছামতো মন্তব্যের জন্য সকল দর্শক-ভক্তরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্র-পত্রিকায় আমি লক্ষ্য করেছি যে বর্ষা বাইরের ছবি করতে চেয়েছে অথচ এ ব্যাপার নিয়ে বর্ষা আগে কখনো আমার সাথে কিছু শেয়ার করেনি। আমরা সব সময় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম যে, একসাথে কাজ করব। গল্পের প্রয়োজনে আমাদের ছবিতে যে কোনো চরিত্র থাকতে পারে।
আর সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এতগুলো চলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করেছি। বিভিন্ন সাক্ষাতকারে বর্ষাকে প্রশ্ন করা হয়, টম ক্রুজের সাথে অভিনয়ের সুযোগ পেলে কি করবেন? তার উত্তর একটাই ছিল, অনন্তই আমার টম ক্রুজ। আমাকে অনেকে বলত, মুম্বাইয়ের নায়িকার সাথে অভিনয়ের ব্যাপারে। আমার উত্তর ছিল, বর্ষা মুম্বাইয়ের নায়িকাদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। আজ আমার সাফল্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আমার ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিটা ইংল্যান্ডের আটটি সিনেওয়ার্ল্ডে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং তাদের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে যে, আমাদের পরবর্তী প্রতিটি ছবি বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডে একযোগে মুক্তি পাবে।
আমি আমার সকল সরকারি, বেসরকারি এমনকি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সকল অনুষ্ঠানে আমি বর্ষাকে সাথে নিয়ে যেতাম। এতো ভালো সম্পর্ক, এতো সফলতার মাঝে এসব কি হলো?
বর্ষা একা এই পরিস্থিতে সোমবার কলকাতা গিয়েছে। একটা মেয়ে স্বামী ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়া কতখানি স্বাভাবিক, আপনারাই বলুন। আমার কথা ছিল সবকিছু সমঝোতার মাধ্যমে হোক।
আমার সাথে আসলে বর্ষার কি হয়েছিল?
বর্ষা ফ্রিডম লাইফ লিড করতে চায়। সে যে কোনো সময় বাসা থেকে বের হয়ে যেতো। আমি তাকে প্রশ্ন করতাম, তুমি এভাবে বাসা থেকে বের হয়ে যাও, এটা ঠিক না। উত্তরে সে বলত, কাজ থাকলে বাইরে যাবই। এভাবে এক কথা, দুই কথায়, দু’জনেই উত্তেজিত হই। পরে ওর মা, বাবা, ভাই, বোন, সবাই রুমে আসে। আমাকে বোঝায় এবং এর মাঝে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তখন আমি নিচে দারোয়ানকে বলি সে যেন বের হয়ে না যায়। কারণ এটা একটা মানইজ্জতের ব্যাপার।
তারপরও সে সকল বাধা উপেক্ষা করে বের হয়ে যায়। বের হয়ে যাওয়ার পর, আমি তার রুমের ড্রয়ার চেক করি এবং সেখানে একটি ফোন পাই, যা এর আগে কখোনই আমার জানা ছিল না। ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং আমাদের বাংলাদেশে মোট চারজনের সাথে তার যোগাযোগ।
পরে তার ল্যাপটপ সার্চ করে দেখি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন নামে সে তাদের সাথে চ্যাটিং, ভয়েজ চ্যাটিং, ভিডিও চ্যাটিং যা রীতিমত সারা রাত করত। আমি সবকিছু মিলিয়ে অনুভব করি যে, এভাবে তার বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ এবং প্রায়ই বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া, সবকিছু মিলিয়ে তারপরই আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার প্রয়োজন মনে করি এবং জিডি করি।
তারপর রাতে থানা থেকে ফোন আসে যে বর্ষা থানায় গেছে জিডি করেছে, আমি তখন মীমাংসার জন্য বর্ষার মা, বাবা সবাইকে নিয়ে থানায় যাই। থানায় তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও সবাই ব্যর্থ হয়। পড়ে একসাথে থানা থেকে বের হয়ে আসি। সে তার বাসায় যায় এবং আমি আমার বাসায়।
পরবর্তীতে আমরা দু’জন একসাথে থানায় গিয়ে আমাদের করা জিডিটি প্রত্যাহার করি। এর মাঝে কিছু ঘটনা ঘটে যা আমি সবশেষে বলছি।
এদিকে হঠাৎ করে বিকেলে জানতে পারলাম সে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে কলকাতা গেছে, যা এয়ারপোর্টে কোনো একজন ভক্ত দেখে সাথে সাথে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়। স্ট্যাটাসে লিখে, ‘একটু আগে চিত্রনায়িকা বর্ষা জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে কলকাতা যাচ্ছেন, কিন্তু সাথে অনন্ত নেই। বর্ষা একা। ব্যাপারটা কেমন হল?’
এরপর আমি রাহার ব্যাপারে বলি, আমার এ ব্যাপারে কথা বলতে জঘন্যতম ঘৃণা ও লজ্জা লাগছে, একজন মৃতের সাথে আমাকে এভাবে জড়ানোর জন্য। এ ব্যাপারে বর্ষাও একটি জাতীয় দৈনিকে আমাদের মধ্যে এতো ঝামেলা সত্ত্বেও বলছে, রাহার সাথে আমার কোনরূপ যোগাযোগ ছিল না বা নেই। রাহার পরিবার থেকেও একই স্বীকার উক্তি একটি দৈনিকে প্রচার হয়। রাহা আমার প্রথম ছবিতে, শুধু একটি গ্রুপ অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করেছিল। তার সাথে আমার কোনো পরিচয় ছিল না, যোগাযোগও ছিল না। তবে কেন এই ধরনের অপপ্রচার?
সবশেষে বলতে চাই যে, বর্ষা ও আমার মাঝে আন্ডারস্ট্যাডিং না হওয়ায় আমাদের মাঝে এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমি আরও খোলামেলাভাবে বলতে চাই, আমাদের মাঝে ডিভোর্স হয়ে গেছে।”
এলআর/