মামলা মোকদ্দমাই যেন গ্রামীণফোনের করপোরেট কালচার

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  বহুজাতিক মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড এদেশে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অধিকাংশ মামলাই নিস্পত্তি করতে পারেনি। রিট পিটিশন দায়ের করে মামলার কার্যক্রম বা রায় স্থগিত করে রাখাই যেন এ প্রতিষ্ঠানটির কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের অপতৎপরতা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রকাশ করা হলো দ্বিতীয় পর্ব।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৭ সালের জুন মাস থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো সারাদেশে মোট এক কোটি ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৪ টি রিপ্লেসমেন্ট সিম ইস্যু করে। আর এ সিমগুলোর মধ্যে অধিকাংশই রিপ্লেসমেন্ট করেছে গ্রামীণফোন লিমিটেড।

ওই তদন্তে পরীক্ষা নিরীক্ষাকৃত পাঁচ হাজার সিমের মধ্যে গ্রামীণফোনের এক হাজার ৪শ’ সিম রিপ্লেসমেন্টের প্রমাণ রয়েছে সংস্থাটির কাছে। এসব সিমের বিপরীতে আদায়কৃত ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ করেনি গ্রামীণফোনসহ অন্যান্য অপারেটরগুলো। এ কারণে রাজস্ব ফাঁকির বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটের টাকার ওপর আরও দুই শতাংশ অতিরিক্ত কর মিলিয়ে শুধু গ্রামীণফোনের কাছেই এনবিআরের পাওনা রয়েছে এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

এনবিআরের পক্ষে এই বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে সরকারি এ সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো। মামলার প্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ জুন এক রায়ে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এনবিআরকে ১২০ দিনের মধ্যে এ বিপুল অঙ্কের কর সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ লক্ষ্যে গত কয়েক মাসে এনবিআর ও মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিফোন অপারেটর অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এর মধ্যে বেশ কয়েক দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো ফলপ্রসু সমাধান হয়নি। আর এসব বৈঠকে অনমনীয় মনোভাবাপূর্ণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গ্রামীণফোন।

বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, গত বছর অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ৭১ লাখ সিম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের ২৩ লাখ ৫০ হাজার সিম রয়েছে। এছাড়া ২০০৫ সালে এক অভিযানে রাজধানীতে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় গ্রামীণফোনের কিছু সিম জব্দ করা হয়েছিল। ওই সময় এ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করে বিটিআরসি। এসব মামলাও রিটের কারণে স্থগিত হয়ে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিআরসির একাধিক কর্মকর্তা এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, গ্রামীণফোনের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বহু অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যখনই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের হয় তখনই উচ্চ আদালতের মাধ্যমে তা স্থগিত করে রাখে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনিয়ম অডিট করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। আর এরই ফাঁকে তারা বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলেছে।

গ্রামীণফোনের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস তাহমিদ আজিজুল হক এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, গ্রামীণফোনের কোনো বকেয়া রাজস্ব রয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। এছাড়া মামলা মোকদ্দমার বিষয়ে না জেনে আমি কিছু বলতে পারব না।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ