জাপা প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কখনোই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এইচ এম এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি । যেতে পারেনি সরকারের ইচ্ছার বাইরে । এখনো জাতীয় পার্টিতে যা হচ্ছে তা মূলত এরশাদ ও রওশনের সিদ্ধান্ত নয়। জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন, মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির সদস্য মনোনয়ন এবং  দল ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব প্রশ্নে শীর্ষ নেতৃত্ব পুনর্গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল সাংগঠনিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছন জাতীয় পার্টির নেতারা।

জাতীয় পার্টি নেতাদের অভিযোগ.আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই জাপার জন্য ক্ষতিকর। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে আওয়ামী লীগ। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবার লাঙ্গল প্রতীক ও মন্ত্রীত্ব দিয়ে জাপাকে ভাঙার চেষ্টা করেছে। ৯৬ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করা হয়। এবারও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি বিভক্ত হয়। এখনও সরকারে থাকা না থাকা প্রশ্নে জাতীয় পার্টি বিভক্তির সন্মুখীন।

গত বুধবার গুলশানে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এরশাদ বলেন, এখনো জাতীয় পার্টি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র চলছে। এ অপতৎপরতা রুখতে হবে।

তিনি  বলেন, অনেক কথা বলার ছিল, বলতে পারছি না। কেন নির্বাচনে যেতে চাইনি, কেন যাইনি তা স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। পরে একদিন বলবো।

জাতীয় পার্টির আরেকটি সূত্র জানায়,সরকারের সঙ্গে সমঝোতা প্রশ্নে এরশাদকে নিয়ে আস্থা সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বিশ্বাস রওশন এরশাদের ওপর। দাম্পত্য জীবনে অসন্তোষ থাকলেও রওশন কখনো এরশাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাননি। তবে সরকার রোষাণলে পড়ে এরশাদকে মামলার সাজা থেকে রক্ষা করতেই রওশন নির্বাচনের বিরুদ্ধে যাননি। সরকারের চাপেই তিনি বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নেন।এখন নেয়ার চেষ্টা করছেন দলের প্রধান কর্ণধারের দায়িত্ব।

তবে এরশাদপন্থী নেতাদের অভিযোগ, সরকারি প্ররোচনায় আগ থেকেই এরশাদকে রাজনৈতিকভাবে নির্বাসিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলটির দুই শীর্ষ নেতা। আর এই পরিকল্পনার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেন রওশনকে। তারা চান রওশনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সব-ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে এবং দলের কর্তৃত্বও আনতে চান নিজেদের হাতে। রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেই এসব কার্যক্রম চালাতে চেয়েছিলেন এরা।

কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রওশন থাকলেও চেয়ারম্যান পদে বহাল তবিয়তে থাকবেন এরশাদ। তিনি যে কোনো সময় চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন রওশনকে। এই পদ্ধতিতে উদ্দেশ্য সফল হবে না বলেই তারা রওশনের হাতে তুলে দিয়েছেন নতুন ছক।

জাপা সূত্রে জানা গেছে, দলের কার্যক্রম থেকে কৌশলে এরশাদকে দূরে রাখার পরামর্শ রওশনকে দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব কার্যক্রম পরিচালনায় দলের অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্যকে নিজের পক্ষে আনতেও পরামর্শ দেয়া হয় রওশনকে, যাতে যে কোনো সময় ইচ্ছা করলেই চেয়ারম্যানের পদ থেকে এরশাদকে অপসারণ করা যায়। এটা দলটির গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী হবে না।

তবে এ ব্যাপারে এরশাদ সমর্থক একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী জাতীয় পার্টিতে পরিণত করা হচ্ছে। এরশাদকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্য সরকারি প্রেসক্রিপশনে রওশনকে ব্যবহার করছে জাপার কিছু শীর্ষ নেতা। রওশন এরশাদের সহজ সরলতার সুযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।

সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সংসদে সংসদ নেতার কক্ষে শেখ হাসিনা ও এরশাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করতে  এরশাদকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রওশনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে জাতীয় পার্টি আরও এগিয়ে যাবে বলে তিনি এরশাদকে বলেন।

জাতীয় পার্টি নেতাদের অভিযোগ, ২৩ বছর ধরে যারাই ক্ষমতায় এসেছে সবাই জাতীয় পার্টিকে নির্যাতন করেছেন।  জাতীয় পার্টি  দুর্বল বলেই তাদের অবস্থান বদলাতে হয়। কথা বদলাতে হয়। শক্তিশালী হলে তো অবস্থান বদলাতে হতো না।

এরশাদের মুখপাত্র ববি হাজ্জাজ বলেন, এরশাদ দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সরকার প্রার্থীদের এমপি হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। একারণে এসব লোক এমপি নির্বাচিত হন।কর্মীরা যদি শক্তিশালি হতো তাহলে এসব নেতারা নির্বাচন করতে পারতেন না।

জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রুবেল এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সরকার জাতীয় পার্টিকে বশে আনতে না পেরে প্রতিহিংসার আশ্রয় নেয়। মিথ্যা মামলায় এরশাদকে ফাঁসাতে চায়। শেখ হাসিনা যাই করুক না কেন তাকে মনে রাখতে হবে এরশাদ মানে জাতীয় পার্টি আর জাতীয় পার্টি মানে এরশাদ। ম্যাডাম রওশন সহজ সরল মানুষ তাকেও শেখ হাসিনা ব্ল্যাকমেইল করছেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ