বাংলাদেশের যন্ত্রণার হার

স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ব্যবধান নেমে এসেছিল ১ বলে! টি-২০ সিরিজের দুটি ম্যাচই যে হারতে হয়েছিল শেষ বলের নাটকীয়তায়। ওয়ানডে সিরিজে সেই হতাশা কাটিয়ে প্রত্যয়ী সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। তারপরও মানতে হল সেই যন্ত্রণার হার। শ্রীলঙ্কার ১৮০ রানের জবাবে ৩৯.২ ওভারে ১৬৭ রানে গুটিয়ে ১৩ রানের হার মেনে নেয় বাংলাদেশ। তিন তিনটি রান আউটের জন্যই হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ হাত ফস্কে যায় তাদের।

মমিনুল-শামসুরের দৃঢ়তায় শ্রীলঙ্কার ১৮০ রানের জবাবে ২১ ওভারে ৩ উইকেটে একটা সময় ১১৬ করেছিল বাংলাদেশ। তবে পরপর শামসুর,সাকিব ,নাসির ও মাহমুদুল্লাহর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। নাসির ও মাহমুদুল্লাহ সেনানায়েকের একই ওভারে ফেরায় ১৩৩ রানে ৪ উইকেট থেকে ১৩৩ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয় মুশফিকের দল।  তারপরও জয়ের জন্য শেষ ৪২ বলে দরকার ছিল ১৯ রান হাতে ছিল ২ উইকেট। লক্ষ্যটা কঠিন নয়। দরকার শুধু উইকেটে পড়ে থাকা। সেটাই পারল না বাংলাদেশ।

আশার দীপ হয়ে ক্রিজে ছিলেন মুশফিক। সেই মুশফিকও আউট হয়েছেন ম্যাথুজের বলে স্কুপে সাঙ্গাকারাকে ক্যাচ দিয়ে। ম্যাচের এমন পরিস্থিতিতে এমন শটের দরকার ছিল না কেন।

এর আগে সোহাগ গাজীর সাথে সপ্তম উইকেটে ৯ রানের জুটি গড়ে চাপটা কাটানোর চেষ্টা করছিলেন মুশফিক। তবে সোহাগ অবিবেচকের মত ম্যাথুজকে তুলে মারতে গিয়ে ভিথাঙ্গেকে ক্যাচ দিলে চাপটা আরও বাড়ে বাংলাদেশের। আরাফাত সানিও ম্যাথুজের অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে খোঁচ দিতে গিয়ে ক্যাচ দেন সাঙ্গাকারাকে। ম্যাচে তখন হয়ে পড়েছি ফিফটি। হারের কিনারা থেকে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কৃতিত্বটা লঙ্কান অধিনায়ক ম্যাথুজের। সোহাগ,সানি,মুশফিককে ফেরানোর পাশাপাশি অসাধারণ নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।

৪৪ করে মমিনুল ফিরলেও ফিফটি করে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে রান আউট হয়েছেন শামসুর।  শামসুর টেস্ট সেঞ্চুরির পাশাপাশি এর আগেও ওয়ানডেতে করেছেন ফিফটি। তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ফিফটি পেলেন তিনি। তবে ৪৯ বলে ৫ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ৬২ করে আউট হয়েছেন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ব্যাট ক্রিজ ছোঁয়ার আগে হাত ফস্কে পড়ে গিয়েছিল শামসুরের। তবে সাঙ্গাকারা যখন স্টাম্প ভেঙ্গেছিলেন সে সময় পা’টা মাটিতেই ছিল। তারপরও বাংলাদেশের টিভি আম্পায়ার আনিসুর রহমান আউট দেন তাকে! এজন্যই ম্যাচ শুরুর আগে মুশফিক বলেছিলেন ‘পক্ষপাতিত্ত্ব চাই না নিরপেক্ষতা চাই।’

টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি থাকলেও ওয়ানডেতে এখনও ফিফটির দেখা পাননি মমিনুল। সেই অতৃপ্তিটা মিটল না শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মঙ্গলবার প্রথম ওয়ানডেতেও । তবে পেরেরার বলে দিলশানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৫৩ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৪ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন তিনি। এটাই তার ওয়ানডেতে সেরা ইনিংস। চট্রগ্রামে শেষ টেস্টে সেঞ্চুরির পর টি-২০ সিরিজে বাদ পড়েছিলেন মমিনুল। সেই জ্বালাটাই হয়ত জুড়ালেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে।

মালিঙ্গার দ্বিতীয় বলেই কোন রান না করে ফিরেছিলেন এনামুল হক বিজয়। তার ক্যাচ স্লিপে সেনানায়েকে ছাড়লেও মাটিতে গড়িয়ে পড়ার আগে সেটা তালুবন্দী করেন ম্যাথুজ। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৭৯ করে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন মমিনুল ও শামসুর। মমিনুল ও শামসুর ফেরার পর সেই লড়াই অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ অন্যদের।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের শুরটা ছিল ‘বাদল দিনে বাংলাদেশের সূর্যের হাসি’র মত।  তবে থিসারা পেরেরা ঝড়ে সেই হাসিটা থাকেনি প্রথম ইনিংসে। টস জিতে বোলাররা  চাওয়ার দ্বিগুণ পারফর্ম্যান্সে ৬৭ রানেই তুলে নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ৮ উইকেট। সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েই বাংলাদেশি বোলারদের তুলোধুনো করেছেন পেরেরা। তার ৫৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ৬ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৮০-তে শ্রীলঙ্কা ৪০ ওভারে অলআউট হয় ১৮০ রানে।

বাংলাদেশের ফিল্ডাররা অবশ্য চারটি ক্যাচ ছেড়েছেন আজ। সর্বশেষ ৭৬ রানে থাকার সময় পেরেরার ক্যাচ মিস করেন সাকিব। এই মিসগুলোরই চড়া মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ একটা সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন ইনিংসের শংকায় পড়েছিল ম্যাথুজের দল। তবে নবম উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তাদের সর্বনিম্ন ইনিংস ১৪৭ পেছনে ফেলেছেন থিসারা পেরেরা ও সেনানায়েকে। শেষ পর্যন্ত ৪৩ ওভারে কমে আসা ম্যাচে তারা করে ১৮০।

পেরেরা ও সেনানায়েকের  দৃঢ়তাতেই দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে শেষ বলে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। তারাই  গলার কাঁটা হয়ে গেছেন আবারও। ৮২ রানের জুটিটা শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গেছেন সাকিব। ৩০ করা সেনানেয়েকেকে বোল্ড করেন তিনি। ৪০ বলে ২ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ফিফটি করেন পেরেরা। ওয়ানডেতে এটা তার তৃতীয় ফিফটি।  আরাফাত সানির এক ওভারেই আবার টানা ৩ ছক্কা মেরেছেন পেরেরা। তিনি অপরাজিত থেকে যান ৫৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ৬ ছক্কায় ৮০ রানে। শেষ ব্যাটসম্যান মালিঙ্গাকে ফেরান সোহাগ গাজী।

বৃষ্টিতে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে চমক ছিল তামিম ও মাশরাফিকে ছাড়া খেলতে নামার সিদ্ধান্ত। গ্যালারিতে ফিসফাস সহ-অধিনায়কত্ব নিয়ে ঝামেলায় না আবার বাদ দেয়া হল তাদের! সেই গুঞ্জনে আর মাথা ঘামানোর সময় দিলেন না বোলাররা। ৬ষ্ঠ ওভারেই দুই ওপেনার দিলশান (৩) ও পেরেরাকে (২০) ফেরান রুবেল। ভয়ংকর সাঙ্গাকারার(৮) উইকেটটি নিয়ে স্বস্তিটা আরও বাড়ান আল আমিন। এরপর আরাফাত সানি ও সাকিবের ঘূর্ণিতে একে একে ফিরেন প্রিয়ঞ্জন (৬),ম্যাথুজ (৩) ও কুলাসেকারা। সানি ২টি ও সাকিব নেন ২ উইকেট।

টেস্টে সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া ভিথাঙ্গেকে (৭) দূর্দান্ত থ্রোতে রান আউট করেন মুশফিক। চোটের জন্য উইকেটকিপিং না করলেও ফিল্ডিংয়ে ক্ষিপ্রই ছিলেন বাংলাদেশি অধিনায়ক। এরপর অবশ্য পাল্টা আক্রমণে ঘুড়ে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ