প্রচারই কাল হলো রাসেলের

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির কথিত অডিও বার্তা প্রচারের দায়ে কারাদণ্ডের মুখোমুখী  মো. রাসেল বিন সাত্তারের।

বিদেশি ওয়েবসাইটের অডিও-ভিডিও বার্তা (ক্লিপ) প্রচার করায় আইসিটি আইনের ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সূত্র। আর এ ধারায় কারদণ্ডের মেয়াদ ৭ থেকে ১৪ বছর।

গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির কথিত অডিও বার্তা নতুন করে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশের ঘটনায় টাঙ্গাইলের টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের শেষ বর্ষের ছাত্র মো. রাসেল বিন সাত্তার (২১) মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে র‌্যাব-১২ এর সিপিসি-৩ (টাঙ্গাইল) এর একটি বিশেষ দলের হাতে আটক হন।

র‌্যাব-১২ এর সিপিসি-৩ (টাঙ্গাইল) ইনচার্জ মোহাম্মাদ মিরান হোসেন এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, টাঙ্গাইলের মাঝিপাড়া এলাকা থেকে মিজান মেসের একটি রুম থেকে তাকে আটক করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে তিনটি মোবাইল, দুটি ল্যাপটপ এবং জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির ব্যবহৃত দুই শতাধিক রিচার্জ কার্ড, প্রোগ্রামের সিডির অস্তিত্ব পাওয়া যায় রুমে।

রাত ২টার দিকে অভিযানের শুরুতে মেসের সবাইকে ডেকে তোলা হয়। এরপর তাদের মধ্যে থেকে রাসেলকে শনাক্ত করে তার রুমে তল্লাশী চালিয়ে বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। রাসেল ওই মেসে তিন বছর ধরে থাকতো বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রাসেল বিন সাত্তার সাংবাদিকদের জানান, জাওয়াহিরির ভিডিও প্রচারের জন্য তিনি দায়ী। বিভিন্ন ইসলামিক সাইটের প্রতি তার আগ্রহ রয়েছে। এ আগ্রহ থেকেই ‘দাওয়াহইলাল্লাহ’ নামের একটি সাইটের লিংকে লাইক দেই। এরপর ওই সাইট থেকে আল জাওয়াহিরির ভিডিওটি তার কাছে আসে। পরে সেটি নিজের বিভিন্ন সাইট ও ব্লগে ছড়িয়ে দেই। তবে নিজে এই বার্তা সংগ্রহ বা ইউটিউবে আপলোড করেননি বলে জানান তিনি।

রাসেলকে আটকের পর র‌্যাব সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান দাবি করেন, সম্প্রতি ইন্টারনেটে আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির পক্ষ হতে বাংলাদেশ ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অফ সাইলেন্স নামে একটি অডিও ক্লিপ বিভিন্ন ওয়েব সাইট ও ইউটিউবের মাধ্যমে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওটির মূল ভয়েস আরবিতে হলেও নিচে ইংরেজিতে ডাবিং দেখানো হয়, যেখানে বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দিয়েছে আল-কায়েদা এইরূপ প্রচারিত হয়।

অডিও ক্লিপটির উৎস খুঁজে দেখা যায় এটি “ফধধিযরষধষষধয.ড়িৎফঢ়ৎবংং.পড়স” নামক পেইজে  গত ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় সর্বপ্রথম আপলোড করা হয়। এই পেইজটি মূলত বালাকোট মিডিয়া হতে পরিচালিত হয়। বালাকোট মিডিয়া পাকিস্তান ভিত্তিক একটি সংগঠন। ‘দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ’ বালাকোট মিডিয়ার পরিবেশনায় প্রায় নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে জিহাদের ডাক দিয়ে আসছে।

এই পেইজ হতে আয়মান-আল-জাওয়াহিরি বাদেও ওস্তাদ আহমেদ ফারুক, ওস্তাদ তামিম আদনানী প্রমুখের আধ্যাত্মিক নেতাদের বাণী প্রচার করা হয়। আল-কায়েদার উক্ত অডিও ক্লিপটি পরবর্তী সময়ে গত ১৪ জানুয়ারি  মরযধফড়ষড়মু হবঃ এ পুনরায় প্রকাশিত হয় এবং সম্প্রতি গত ফেব্রুয়ারি  মাসে ইউটিউব সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রচারিত হয়। বাংলাদেশে উক্ত অডিও ক্লিপটি প্রচারনায় ভূমিকা রাখতে কোনে চক্রটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে র‌্যাব মঙ্গলবার ভোরে টাংগাইল সদরের মাঝিপাড়া এলাকা থেকে মো. রাসেল বিন সাত্তার খানকে আটক করে। রাসেল বিন সাত্তার একজন ব্লগার ও ওয়েব ডেভলপার হিসেবেও কাজ করে।

তার ইয়াহু আইডি শৎধংবষ৭৩@ুধযড়ড়.পড়স এ আল-কায়েদার জিহাদী ক্লিপ যেদিন আপলোড করা হয়, সেই দিনই ‘দাওয়াহ-ইল্লাল্লাহ’ হতে প্রেরণ করা হয়। তার নিজের তৈরি করা পেইজ সমূহের মধ্যে ধসধৎফবংযাধনহধ. নষড়মংঢ়ড়ঃ.পড়স, রংষধসবৎধষড়.ড়িৎফঢ়ৎবংং.পড়স অন্যতম। উৎস খুঁজে দেখা যায়, রংষধসবৎধষড়.ড়িৎফঢ়ৎবংং.পড়স নামক পেইজে উক্ত অডিও ক্লিপটি গত ৮ ফেব্রুয়ারি ংরষবহঃ মবহড়পরফব রহ ইধহমষধফবংয নামে আপলোড করা হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় এটি সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে, অর্থাৎ ‘দাওয়াহইলাল্লাহ’ বা বালাকোট মিডিয়ার এজেন্ট হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশে এই অডিও ক্লিপ প্রচার করতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

তিনি আরও জানান,   মো. রাসেল বিন সাত্তার আইটি বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ। এছাড়া তিনি ফেসবুক ও ব্লগে অত্যন্ত সক্রিয়। ফেসবুকে তার অনেকগুলো আইডি রয়েছে। এছাড়া তার তৈরিকৃত বিভিন্ন ফেসবুক পেইজের মধ্যে ‘আমার দেশ ভাবনা’, ‘বাঁশের কেল্লা ভার্সন-২’ ‘দৃষ্টিভঙ্গি’, ‘গণতন্ত্র নিপাত যাক’, ‘ব্লগার রাসেল’ উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি পেইজেই তিনি অনেক রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক আর্টিকেল ও ছবি আপলোড করেন। এছাড়াও পেট্রোল বোমা তৈরির টিপস্ ও বিভিন্ন জিহাদী স্লোগানের মাধ্যমে দেশে অরাজকতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও তার ই-মেইল আইডি খুঁজে দেখা যায় তিনি গত ৭ মে ইরানের প্রেসিডেন্টের ই-মেইল আইডিতে “গধংং শরষষরহম ড়হ ঢ়ৎড়ঃবংঃবৎং রহ উযধশধ ধঃ হরমযঃ নু ধৎসবফ লড়রহঃ ভড়ৎপব ধঃ ষবধংঃ শরষষবফ ঃযড়ঁংধহফং নামে বানোয়াট তথ্য ও ছবি প্রেরণ করেন, যা দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে।

তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড গবেষনায় এটি ধারণা করা যায় যে, তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমে জড়িত এবং তাদের এজেন্ট হিসেবে দেশে বিভিন্ন প্রচারণায় সাহায্য করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। দেশে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অরাজকতা দূরীকরণে যে কার্যক্রম শুরু করেছে তা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে তার যাবতীয় অনলাইন কার্যক্রম মনিটরিং এ রাখা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্ণেল মোহাম্মাদ আজাদ এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ এসব ব্লগ সাইটে রাসেল রাষ্ট্রবিরোধী ও জঙ্গিদের উস্কে দেওয়ার মতো বক্তব্য ও বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশে জেহাদের ডাক সম্পর্কিত ভিডিও ও অডিও বার্তাও সে প্রকাশ করে ধর্মীয় উগ্রবাদকে আরও উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে টাঙ্গাইল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তার সঙ্গে আরও জড়িতদেরও  আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ