হারানো ইমেজ উপজেলায় ফিরে পেতে চায় ইসি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আসন্ন উপজেলা নির্বাচন দ্বারা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই নিবাচন সামনে রেখে রণ প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একদিকে বিণা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের রেকর্ড, অন্যদিকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় নানা বিতর্কের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। তাই আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উৎসবের আমেজে তৈরি করে বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় নির্বাচনের স্বাধ নিতে ও ভোটারদের দিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক কথায় হারানো ইমেজ ফিরে পেতে মরিয়া নির্বাচন কমিশন।
তারই লক্ষ্যে সর্বস্তরের ভোটার, বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়ার প্রতি জোর প্রচেষ্টার কমটি নেই ইসিতে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ৪র্থ্ ধাপের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এ সিদ্ধান্তের ফলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশন বিশেষ করে মহিলা ভোটার সংখ্যার বৃদ্ধিতে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যেতে ।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল মোবাররক এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, ভোটের দিন সকল ভোটারদের ভোট প্রদান নিশ্চিতকরণে প্রতি জোর দিয়ে বলা হয়েছে নির্বাচন কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে সংখ্যালুগুদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলাভুক্ত সকল স্তরের ভোটারদের বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে সকল শ্রেণীর ভোটার যেন নিশ্চিত ভাবে ভোট দিতে পারেন, সেজন্যও উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয়েছ।
তিনি জানান, শুধু আগামীকালের নির্বাচনের জন্য নয়, সকল উপেজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ও ভোটের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ ইউনিটসমূহের নিবিড় টহলের ব্যবস্থা থাকবে, ভোটকেন্দ্র পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অশুভ কার্যকলাপ প্রতিরোধে সদা সর্তক থাকতে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে ইসির।।
অন্যদিকে নির্বাচনে সকল প্রকার প্রভাবের ঊর্দ্ধে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দিয়ে কমিশন বলেছে, বিশেষ কোনো মহলের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ যেন নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন করতে না পারে তা আইন, বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালার আলোকে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া জনগণের কাছে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষকে হেয় হতে হয় এমন কোনো কাজ না করার প্রতিও জোর দেওয়া হয়েছে।
একই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো: শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন নির্বাচনী বিভিন্ন অপরাধ কঠোরভাবে প্রতিরোধে জন্য গঠন করা হয়েছে ভিজিল্যান্স টিম, অবজারভেশন টিম। তারা নির্বাচনী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সরাসরি কমিশনকে অবহিত করবে। নির্বাচনে একেবারে মাঠ পর্যায়ে থাকছে মনিটরিং টিম। যারা নির্বাচনী আচরণ বিধি, আইন ও যথাযথ দিক সঠিকভাবে পালন হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখবে।
কমিশনার জানান, নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কমিশনের নির্দেশ পালন না করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে ইসি।
কমিশনার শাহনেওয়াজ আরও জানান, ইতোমধ্যেই আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সুষ্ঠু অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন করতে ৯৭টি উপজেলায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচদিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন তারা। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল শুরু করেছেন। বড় উপজেলায় এ সংখ্যা আরও বেশি। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি থাকবছ। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকছে। এছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা-৪, পুরুষ-৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র, পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধু পুলিশের ক্ষেত্রে দুজন হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৩৮৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও মাঠে রয়েছেন।
কমিশনার শাহনেওয়াজ আরও জানান, একইভাবে, একই কারণে সকল উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে ৪০ জেলায় ৯৮টি উপজেলায় নির্বাচন করছে ইসি। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। এতে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬০জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৩৩০জন এবং মহিলা ৮২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৩০জন। নির্বাচনে ৬৯৯২টি ভোটকেন্দ্রের ৪৪২২৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।
দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থী বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় প্রায় ৫ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগই পাননি। ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ হলেও দেশজুড়ে দুর্বৃত্তদের সহিংসতার কারণে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিলো না। এসব মিলিয়ে সংসদ নির্বাচেন এবার ভোটের হার ৪০ শতাংশের কম ছিলো।