বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি বিএনপির

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করেছে বিএনপি। এ তালিকায় বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের  ২৬১ জনের নাম ও ঠিকানা যুক্ত করা হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করতে পারেন আগামী সপ্তাহে।

দলের সুত্র জানায়, বিএনপির দফতর থেকে ইতোমধ্যে এ তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।এ তালিকা দলের চেয়ারপারসনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সহদফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি বলেন, ‘সারাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার দলের নেতাকর্মীদের তালিকা প্রস্তুত করার পর, তা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির যে তালিকা করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি  নিহত এবং গুমের ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুর ও সাতক্ষীরা জেলায়। লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছেন ২৯ জন এবং গুম হয়েছেন ৬ জন। সাতক্ষীরায় নিহত হয়েছেন ২৯ জন। গুম হয়েছেন ৫ জন।

ঢাকা মহানগরীতে  গুম হয়েছেন ২১ জন। এর মধ্যে সবই বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ঢাকার গুমের তালিকার ১৫ জনই ছাত্রদলের নেতাকর্মী। তবে গুমের সংখ্যা বেশি হলেও ঢাকা মহানগরীতে হত্যার শিকার হয়েছেন মাত্র একজন, যিনি জামায়াতের মহানগর কমিটির মজলিসে শূরা সদস্য।

অন্যান্য জেলার মধ্যে সিলেটে গুম একজন। তবে কেউ নিহত হননি। ঠাকুরগাঁওয়ে নিহত চার, দিনাজপুরে আটজন। নীলফামারীতে নিহতের সংখ্যা ছয় ও গুমের সংখ্যা নয়। লালমনিরহাটে নিহত ছয়, রংপুরে দুই ও কুড়িগ্রামে একজন নিহত হন। গাইবান্ধায় নিহত ছয় ও গুম  পাঁচজন। জয়পুরহাটে ১২, বগুড়ায় নিহত পাঁচ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৩, নওগাঁ দুই, রাজশাহী দুই, নাটোর দুই, সিরাজগঞ্জে ১৫, পাবনায় নিহত সাতজন, মেহেরপুরে পাঁচ, কুষ্টিয়ায় চার, চুয়াডাঙ্গায় দুইজন নিহত হয়েছেন। ঝিনাইদহে নিহত দুই এবং গুমও দুইজন। যশোরে নিহত চারজন। মাগুরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও বাগেরহাটে একজন করে নিহত হয়েছেন। খুলনায় নিহত চার ও গুম একজন। কুমিল্লা উত্তর জেলায় নিহত দুই। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলায় নিহত দুই ও গুম দুই জন। চাঁদপুরে ২০, ফেনীতে আট ও নোয়াখালীতে নিহত ১৮। চট্টগ্রাম মহানগরে দুই, চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ১১, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় তিনজন ও কক্সবাজারে নিহত হন ১৯ জন।

নিহতরা হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের মো. হারুন, মো. জয়নাল, আবু হানিফ ও মো. সেলিম। দিনাজুরে সালাহউদ্দিন, বাবুল হোসেন, মাহফুজুল ইসলাম, মাসুদ রায়হান মাসুদ, ফয়েজউদ্দিন, মোজাহেরুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াহেদ মণ্ডল ও আসাদুজ্জামান। নীলফামারীতে মমতাজ হোসেন, জাহাঙ্গীর, গোলাম রাব্বানী, আতিকুর রহমান, মোসলেম উদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিক। লালমনিরহাটে মোবারক হোসেন ফারুক, ফারুক, নাসিম, মনিরুল ইসলাম মনি, আব্দুর রহিম ও সাজু মিয়া। রংপুরে মিরাজুল ইসলাম ও হাজীউজ্জামান সুজন। কুড়িগ্রামে মো. বিপ্লব। গাইবান্ধায় শাহাবুদ্দিন, নাজমুল হাসান, সোহানুর রহমান, আবু সুফিয়ান, নাজমুল হাসান সাকিব, জয়পুরহাটে আব্দুল হাকিম, নাসির উদ্দিন, মজনু, মজিদুল ইসলাম, হেসাব উদ্দিন, ফরমান আলী, পিরোজ হোসাইন, আব্দুর রহমান, ইনসান আলী, শামীম হোসাইন, আসমা খাতুন ও বদিউজ্জামান। বগুড়ায় রুকন উদ্দিন প্রমাণিক ইমরান, মো, ইউসুফ, ইমরান আবদুল্লাহ আল বাকি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মতিউর রহমান, নূরুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, সালাহউদ্দিন, রুবেল, মজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, অলি উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, বসির উদ্দিন, নজিবুর রহমান ও আব্দুল খালেক। নওগাঁয় বাবুল হোসেন ও শোকবর আলী। রাজশাহীতে সুজন ও রাশেদুল হক ঝন্টু। নাটোরে সাইফুজ্জামান সুজন ও বাসার। সিরাজগঞ্জে আব্দুল্লাহেল বাকী, আব্দুল জলিল, আলমগীর হোসাইন সুমন, মোক্তার হোসেন, রুহুল আমিন, আক্তার হোসেন, মামুন বিল্লাহ, ইউনুস আলী, আতাউর রহমান, আল মাহমুদ, ওয়াজেদ আলী, মনসুর আহম্মেদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও মো. জামাল আলী। পাবনায় জাহাঙ্গীর আলম, মানিক হোসেন, ইব্রাহিম চেয়ারম্যান, ফরিদ, আশরাফ, শরিফুল ও শহিদ প্রামাণিক। মেহেরপুরে আব্দুল জব্বার, তারেক মো. সাইফুল ইসলাম, লাবলু, আলিম ও মিলন। কুষ্টিয়ায় মুন্সি রশিদুর রহমান, নুর, রাশেদুল চেয়ারম্যান ও নূর হোসেন দুলাল। চুয়াডাঙ্গায় আব্দুল হাই ও সুজন। ঝিনাইদহে ইসমাইল হোসেন ও এনামুল হক। যশোরে মতিয়ার রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই সিদ্দিক, হাফিজুর রহমান হাফিজ ও কবির হোসেন পলাশ। মাগুরায় মারুফ, বাগেরহাটে আফজাল খান। খুলনায় মোস্তফা কামাল চেয়ারম্যান, সোহাগ, ইলিয়াস ও ইয়াসিন। সাতক্ষীরায় সফিকুল ইসলাম, আব্দুস সবুর সরদার, হাবিবুর রহমান হবি, সামসুল হক, হাফেজ হোসাইন আলী, আতিয়ার সরদার, আরিজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসাইন, শাহী বাবু, হাফিজুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম, আবু হানিফ ছুটন, আবুল কালাম আজাদ, মারুফ হোসেন, আজহারুল ইসলাম, রুহুল আমিন, মোস্তফা আরিফুজ্জামান, শামসুর রহমান, রুহুল আমিন, আরিফ বিল্লাহ, মাহবুবুর রহমান, আলী মোস্তফা, আব্দুল সালাম, সাইফুল ইসলাম, শাহীন আলম, রবিউল ইসলাম, মাহফুজুল হাসান, ইকবাল হোসাইন ও আনোয়ারুল ইসলাম। পটুয়াখালীতে আব্দুস সাত্তার, পিরোজপুরে শুক্কুর আলী, কিশোরগঞ্জে মোস্তাক আহম্মেদ, মুন্সিগঞ্জে কংকন। ঢাকা মহানগরীতে মাওলানা বেলাল হোসাইন। কুমিল্লা উত্তরে জাহাঙ্গীর ও আবু বেপারী। কুমিল্লা দক্ষিণে দেলোয়ার হোসেন ও আনোয়ার হোসাইন। চাঁদপুরে বিল্লাল দেওয়ান, ছোট জামাল, বড় জামাল, শাহ পরাণ, হাফেজ নাজমুল শাহাদাত, রুবেল, ফারুক পাটওয়ারী, হাফেজ মনসুর, তাজুল ইসলাম রতন, মনোয়ার জাওয়াদ সিয়াম, আরজু ঢালী, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, বিল্লাহ হোসেন, মাহফুজ খান, আ. গফুর কারী, আরিফ হেসেন, বাবুল, জাহাঙ্গীর, লিমন ছৈয়াল, আবুল হোসেন, গোলাম মাওলা বিপুল। ফেনীতে আবুল কাশেম, জামশেদ, শহিদুল্লাহ, মিজানুর রহমান মিন্টু, নূরুল কায়সার, হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল সালামত, হারুণ অর রশিদ, আব্দুর রহমান মানিক, নোয়াখালীতে মাহমুদুর হাসান, আব্দুস সাত্তার চান মিয়া, আব্দুর নূর রাসেল, মাহমুদুর হক মিশু. মতিউর রহমান সজিব, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ রায়হান, সাইফুল ইসলাম, হাফেজ জুবায়ের হোসেন, মামুন হোসাইন, মো, সোহাগ, খোকন, আব্দুল সালাম, খুরশিদ আলম, পারভেজ আলম, কুরবান আলী, তৌহিদুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন সুমন। লক্ষ্মীপুরে মাহবুব আলম, সুমন, শিহাব, হরিপদ দেবনাথ, ফয়েজ আহম্মেদ, আসাদুজ্জামান বাবুল, আব্দুল মান্নান, সুমন, শাহাদাত হেসেন রুবেল, দিদার, আবুল হোসেন, মো. সেলিম, জাহাঙ্গীর আলম খোকন, আনোয়ার হোসেন, মনির হোসেন, মো. সেলিম, নজরুল ইসলাম লিটন, মোরশেদ, আজাদ, আবুল কাশেম মো. হানিফ, মো. মহসীন, মোসলেম উদ্দিন, মিজানুর রহমান, হারুল মেম্বার, রুবেল, মো. বাহার, মনির হোসেন, মো. রোমান ও আবু তাহের। চট্টগ্রাম মহানগরে মো, নাসির ও রাজিব। চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় মোশারফ হোসেন, আব্দুল্লাহ আল রাসেল বাবু, আবু বকর সিদ্দিক পারভেজ, রেজাউল করিম রাসেল, আমিনুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম রাসেল, আমিনুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, নূর হোসেন, নিজামুল করিম সজিব ও হাফেজ জসিম উদ্দিন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় এনামুল হক লালু, আব্দুল গফুর, জসিম, কক্সবাজারে মনজুর আলম, সাইফুল ইসলাম বাদশা, মিজানুর রহমান, আব্দুল হালিম, সাজ্জাদ হোসেন, জাকের হোসেন, আক্তার কামাল সাগর, ছৈয়দুল আমিন, শাহাজালাল, সরোয়ার ইসলাম, আমির হামজা, খোরশেদ আলম, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল আজিজ, মো. ইসমাইল, আব্দুর রশিদ, নূরুল হক, তোফায়েল উদ্দিন ও আহম্মদ সালেহ।

যারা গুম হয়েছেন- নীলফামারিতে আশরাফ আলী, আব্দুর রহমান, বাবুল হোসেন, আজিজুল ইসলাম, ছকিন উদ্দিন মেম্বার, মহিদুল ইসলাম, আব্দুল মালেক কাজী, আব্দুল মালেক ও রাহেদুল ইসলাম দোলন। গাইবান্ধায় নাজমুল হাসান শাকিব, মতিয়ার পারভেজ, মুসা আহম্মেদ, শাখাওয়াত, নুরুন নবী, নবীন মিয়া, ঝিনাইদহে নজরুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিন। খুলনায় ইসলাম। সাতক্ষীরায় কাজী হাসান উদ্দিন, হাফেজ কাজী হেলাল উদ্দিন, হাফেজ কাজী আরাফাত। ঢাকা মহানগরে সাজেদুল ইসলাম সুমন, আবুল হালিম, সেলিম রেজা পিন্টু, সম্রাট মোল্লা, খালিদ হোসেন সোহেল, মাহাবুবুল হক সুজন, ফরহাদ হোসেন, লিটন, তরিকুল ইসলাম জন্টু, আসাদুজ্জামান রানা, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আল আমিন, আশিক, জিয়াউর রহমান শাহীন, সোহেল, রানা, তানভীর, পারভেজ, জসিম, মো. সোহেল ও কাশেম। সিলেটে ইফতেখার আহম্মেদ দীনার, জুনেদ আহম্মেদ ও আনসার আলী। কুমিল্লা দক্ষিণে সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন পারভেজ। লক্ষ্মীপুরে ইকবাল হোসেন জুয়েল, বেলাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, রাজু, ওমর ফারুক ও আব্দুল কাদের।

তালিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত এক নেতা বলেন, ‘এ তালিকাটিও পূর্ণাঙ্গ নয়। তালিকায় আরও নাম যুক্ত হতে পারে। এখনও কাজ চলছে।’

বিএনপির তৈরি তালিকায় জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার ২৬১ জনের মধ্যে জামায়াতের নেতাকর্মী রয়েছেন অন্তত ৮১ জন। জামায়াতের গুম হয়েছেন সাতজন। বাকিরা সবাই বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী বলে দাবি করছেন তথ্য সংগ্রহকারীরা।

বিএনপি সূত্র আরও জানায়, গুমের তালিকাটি কূটনীতিকদের দেওয়া হবে। এর আগে, দেশব্যাপী হত্যা ও গুম নিয়ে উদ্বিগ্ন খালেদা জিয়া গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সময় তিনি দাবি করেন ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনায় তাদের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা ও গুম করা হয়েছে।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে প্রায় তিন মাস সরকার বিরোধী আন্দোলনে এ সব নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ