সারাদেশে সাংগঠনিক সফর করবেন খালেদা জিয়া
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপি চেয়ারাপারসন ও ১৯ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া সরাদেশে পর্যায়ক্রমে সাংগঠনিক সফর করবেন। মার্চ থেকেই তার এ সফর শুরু হবে।
আগামী ১ মার্চ তিনি রাজবাড়ী যাবেন। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়ার এটা হবে রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রথম রাজনৈতিক সফর। রাজবাড়ীতে এদিন বিকেলে স্থানীয় ১৯ দল আয়োজিত জনসভায় দেশের সবর্শেষ রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া।
১৯ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা সফর করবেন বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির গুলশান অফিস সূত্র জানায়, গত ২৯ ডিসেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন ১৯ দলীয় জোট প্রধান। তবে ঢাকার দায়িত্বে থাকা দলটির নেতাদের ব্যর্থতার কারণে ওই কর্মসূচি সফল হয়নি। আন্দোলনও মুখ থুবড়ে পড়ে। এতে তৃণমূলে বিএনপিসহ ১৯ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ, অসন্তোষ ও চরম হতাশা দেখা দেয়। এই উপলব্ধি থেকে বিএনপির হাইকমাণ্ড দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে বেগম খালেদা জিয়ার ঢাকার বাইরে জেলা সফরের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এরই ধারাবহিকতায় বিএনপি চেয়ারপারসনের এই সাংগঠনিক সফর শুরু হতে যাচ্ছে।
অপর এক সূত্র জানিয়েছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় দেশের ৯৭টি উপজেলা নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলায় বিএনপিসহ ১৯দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল জয়লাভকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি হাইকমাণ্ড।এই বিজয়কে ধরে রাখতে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনে জোট সমর্থিত প্রার্থীরা যাতে আরও বেশি জায়গায় জয়ী হতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে বিএনপি।
ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থীদের জয়ে যেন নেতাকর্মীরা আত্মতৃপ্তিতে ভেসে না যায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে সরকারের ভরাডুবি হয়েছে। যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতো তাহলে ৯৫ ভাগ উপজেলায় বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হতো।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আরও বলেন, উপজেলা নির্বাচনে জয় লাভ করে আমাদের আত্মতৃপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরকে গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে সংগ্রাম করতে হবে। রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঢাকার বাইরে সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ ১৯দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বিএনপি প্রধানের এই সফরের মধ্যদিয়ে ১৯ দলীয় জোট মাঠ পর্যায়ে আরও অধিক সংগঠিত হবে। আগামীতে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে নতুন করে নেতাকর্মীরা গতি ফিরে পাবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম এক সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের বিভিন্ন জেলা সফরে সরকারের নানা কমর্কাণ্ডের জবাব দেবেন। নতুন করে নির্বাচন দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন। তিনি সরকারের প্রতি এসব জনসভা থেকে আহ্বান জানাবেন, যেন সরকার নতুন আরেকটি নির্বাচন দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে। সরকার যদি বেগম খালেদা জিয়ার এই আহ্বানের প্রতি গুরুত্ব না দেয়, তাহলে বিএনপিসহ ১৯দলীয় জোট ফের সারাদেশে নতুন আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র এ নেতা।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একদিকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ উম্মুক্ত রাখবেন, অন্যদিকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে ১৯দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে বলবেন।
প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচন নয়। এখন দেশ ভালো চলছে। বিএনপি ট্রেন মিস করেছে। এসব কথা প্রচারের পর তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ১৯ দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে পড়েছে। তাদের চাঙ্গা করতে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার জেলা সফরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।