ফের জাপা মহাসচিব হচ্ছেন হাওলাদার

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  আবারও এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির  মহাসচিব হচ্ছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে নানা বিতর্ক থাকলেও তাকেই এ পদে মনোনিত করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে দলের একাধিক সূত্র।

পার্টি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাউন্সিল আগামী তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই কাউন্সিলের ঘোষণায় দলের ভেতরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দলের নেতৃত্বের পুনর্গঠনে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতুহলের শেষ নেই। কেমন হবে নতুন কমিটি, নতুন কমিটিতে কারা স্থান পাবেন কারা বাদ পড়বেন? মহাসচিব হিসেবে রুহুল আমিন হাওলাদারই বহাল থাকবেন, না নতুন কেউ আসবেন? এরকম অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নেতাকর্মীদের মনে। আবার দলের বাইরেও এ নিয়ে আলোচনার কমতি নেই।

জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, বর্তমান মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সম্পর্কে ঘরে বাইরে বিতর্কের শেষ নেই। জাতীয় পার্টিতে তার প্রতি চরম অসন্তোষ। নীতি-আদর্শ ও সততার প্রশ্নে দল ও সরকারে তার চরম আস্থার সঙ্কট। স্বয়ং এরশাদও তার ওপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু নির্বাচন ও সরকারে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে এরশাদও বেকায়দায়। এ কারণে এরশাদ তাকে ছাড়তে পারছেন না।

জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, রুহুল আমিন হাওলাদার এরশাদের সকল বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাক্ষী ও সহযোগী। বিশেষ মুহূর্তে এরশাদের প্রতি তার আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তিনি  সব সময় অবনত মস্তকে এরশাদের সিদ্ধান্ত পালন করেছেন। এবারও তিনি এরশাদের বিরুদ্ধে যাননি। বেঈমানী করেননি। তিনি রওশনপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলালে আবারও মন্ত্রীসভায় স্থান পেতেন। কিন্তু তিনি মন্ত্রীত্ব বিসর্জন দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির দুর্দিনে রুহুল আমিন হাওলাদারের এই ত্যাগও এরশাদ মূল্যায়ন করেছেন।

জাতীয় পার্টির আরেকটি সূত্র জানায়,  প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে জড়িত রুহুল আমিন হাওলাদার। ২০০২ সালে এ বি এম শাহজাহানের পদত্যাগের পর তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব নেন। পরবর্তী কাউন্সিলেও তিনি মহাসচিবের দায়িত্ব পান। কিন্তু এবার দলের এমপিরা তাকে  মহাসচিব হিসেবে দেখতে চাইলেও আরেকটি বড় অংশ বিরোধিতা করছে। বিশেষ করে প্রেসিডিয়ামের  বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয়। আবার যারা নির্বাচনে এরশাদের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারাও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ অন্য কাউকে মহাচিসব হিসেবে ভাবছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগরের (দ.) সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রুবেল এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, রুহুল আমিন হাওলাদরকে নিয়ে দলে অনেক বিতর্ক আছে। এ সব বিতর্ক অনেকটাই সত্য। তবে আরেকট কথা তিনি এরশাদের সঙ্গে বেঈমানী করেননি। যদি দলে সরকারপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতেন তাহলে এবারও মন্ত্রী হতে পারতেন। এ কারণে পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ তার ওপর কঠোর হতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, দীর্ঘদিন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে ছিলাম। এরশাদ এবং হাওলাদার উভয়ই দুর্নীতিগ্রস্ত। দুজনের চরিত্রে চমৎকার মিল। সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দলের মতোই হাওলাদারও জাতীয় পার্টির জি হুজুর মহাসচিব। এ কারণে এরশাদ  তাকে ছাড়বে বলে মনে হয় না।

পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, এ মুহূর্তে মহাসচিব পদে নতুন কোনো প্রার্থী দেখছি না। আমরা কেউ এ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি না। এ কারণে মনে হয় রুহুল আমিনই ফের মহাসচিব হচ্ছেন।

এ বিষয়ে রুহুল আমিন হাওলাদার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, জন্মলগ্ন থেকে আমি জাতীয় পার্টির সঙ্গে জড়িত। পার্টির নীতি আদর্শের প্রতি আমি অনুগত। দীর্ঘদিন মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছি। দল চাইলে আমি আবারও দায়িত্ব মাথা পেতে নেব।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ