সারাদেশে গ্রেফতার ৩৮২, আহত ৫৭৮ : বিএনপি
১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৩৬ ঘণ্টা হরতালের প্রথম ১২ ঘণ্টা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশবাসী পালন করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনের হরতালে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে ৩৮২ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সময় আহত হয়েছেন ৫৭৮ জন নেতাকর্মী। এছাড়া ৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১ বছর করে সাজা দিয়েছে।’
বুধবার বিকেলে নয়া পল্টন কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ আওয়ামী হিংস্রতা ও বর্বর দুঃশাসনে বিপর্যস্ত। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিহিংসা এবং ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কের মধ্যে অতিবাহিত করছে।’
‘বিরোধী দল দমনে সরকারের দ্রুত বিচার আইনে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজা প্রদান এবং নেতাকর্মীদের আটক, গুম, খুন, অপহরণ এখন প্রাত্যহিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশে আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আরো বলতে চাই, ‘আপনাদের দুঃশাসনের মাত্রা যতই বৃদ্ধি পাবে ততই আপনাদের ধবংস অনিবার্য হয়ে উঠবে’- বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কর্তৃক এযাবৎকালের নৃশংস হামলায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া সারাদেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ২৫ মার্চ সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত বিচার আইনে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত বিরোধীদলীয় সব নেতাকর্মীর অবিলম্বে মুক্তি, সারাদেশে সরকারের নির্দেশে পরিচালিত গণহত্যার প্রতিবাদে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এবং ব্যর্থ, অযোগ্য স্বেচ্ছাচারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছিলাম। দাবি পূরণে সরকার ব্যর্থ কিংবা গড়িমসি করলে আগামীতে একই দাবিগুলো সামনে নিয়ে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো এবং এর সব দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের ১ম দিন অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করায় ১৮ দলীয় জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘দেশে হত্যা, গুম, অপহরণ এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের, রিমান্ডের নামে নির্যাতন এবং জুলুম নির্যাতনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে- যে বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে একাধিকবার আমরা আপনাদের অবহিত করেছি। ক্রমবর্ধমান হত্যার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দেশের বিদ্যোৎসমাজ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চার হলেও এই ফ্যাসিস্ট সরকার কখনোই তা কর্ণপাত করেনি। এখন দেশে পুলিশ ও র্যাব যেভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তা সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চালানো হচ্ছে বলে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের গুলিতে গৃহবধূরাও ঘরের মধ্যে নিহত হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকারের হাতে আইনের শাসন কখনোই সুরক্ষিত থাকেনি। আইনের শাসনের বদলে বর্তমান আওয়ামী সরকার নিষ্ঠুর দলীয় শাসন জারি রেখেছে। কারণ দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে করিডোর, ট্রানজিট, অভিন্ন নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ব্যর্থ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যেন কোনো প্রতিবাদী কণ্ঠ উচ্চারিত না হয়। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, লাগামহীন লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেন জনগণ প্রতিবাদ করার সুযোগ না পায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার মাসে আনন্দ উল্লাসের পরিবর্তে শুধু মৃত্যু সংবাদই শোনাতে হচ্ছে। দেশের সর্বত্র ক্ষমতাসীনদের মদদে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, হত্যা, মিথ্যা মামলা দায়ের এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের মহোৎসব চলছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরই সিলেটে এর প্রতিফলন দেখা গেছে।’
মির্জা ফখরুল হরতাল চলাকালে সারা দেশের জেলাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে বলেন, মঙ্গলবার সকালে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ এমপির নেতৃত্বে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় বেলাল হোসেন নামে বিএনপির এক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং দু’শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
মঙ্গলবার সকালে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা পুলিশের ছাত্রছায়ায় হামলা চালিয়ে উপজেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক খুরশেদ আলম, ছাত্রদল নেতা কাশেম, পিয়াসসহ প্রায় ২০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আহত করে। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পিরোজপুর জেলা বিএনপি হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ এবং আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছাত্রদল নেতা জসিম ফরাজী, যুবদল নেতা মজিবুর রহমানসহ ৫ জনের অধিক নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত করে।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলায় মঙ্গলবার দ্রুত বিচার আইনে ৩০০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শেরপুর জেলায় গত ২৪ মার্চ দ্রুত বিচার আইনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক রুবেলকে ১নং আসামি এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রাজ্জাককে ২নং আসামি করে ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীর নামে দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।