ফের রক্তাক্ত হওয়ার পথে শ্রীনগর

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, মুন্সিগঞ্জঃ আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো রক্তাক্ত হওয়ার পথে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর। নির্বাচনে জয় পেতে ইতোমধ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী তাণ্ডবের শিকার হয়েছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর শত শত কর্মী সমর্থক। তাদের এ নির্যাতন হতে নিস্তার পাচ্ছে না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। নির্যাতনের ভয়ে ইতোমধ্যে অনেক বিরোধী নেতা-কর্মী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সরকার সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

নির্যাতিতরা অভিযোগ করেছে, শ্রীনগরে আওয়ামী প্রার্থী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান সেলিম ভুঁইয়ার কর্মীরা পুরো উপজেলাকে জিম্মি করে রেখেছে। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না অন্য প্রার্থীরা। নির্যাতিতদের আইনি সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসছে না প্রশাসন। তাদের ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। নির্বাচনকে ঘিরে এখানে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

নির্যাতনের বিষয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাজি মমিন আলী এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘সেলিম ভুঁইয়ার লোকজন আমার কর্মী-সমর্থকদের সব সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। আমার প্রচারণায় কয়েক দফা তারা হামলা চালিয়েছে। অথচ প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। কিছু মৌখিক অভিযোগ এসেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিএনপি সমর্থিত দু’পক্ষের মধ্যে বিরাজমান অস্থিরতায় সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা একপ্রকার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে শ্রীনগরের স্থানীয় অধিবাসী ও অবসরপ্রাপ্ত এক পুুলিশ কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, সরকার সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া। তারা বিজয়ী হওয়ার জন্য সব পথ খুলে রেখেছে। কেউ ভোট কেন্দ্রে না গেলেও তারা নিজেরা ভোট দিয়ে জিতবে। ভোট কেন্দ্র দখলের সব পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাকিরের ওপর হামলার পর রক্তাক্ত ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানোর বিরুদ্ধে উপহাস করে সরকার সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম ভুঁইয়া বলেন, ‘এটা একটা সাজানো নাটক। এরশাদ তাকে গুরু মানা উচিত। তার ওপর কোনো হামলা হয়নি।’

নির্যাতিত প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, ‘এখানকার স্থানীয় লোকদের মতো আমিও আতঙ্কে  রয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা বলা যাচ্ছে। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলে আমার জয় নিশ্চিত।’

অপরদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাজি মমিন আলী বলেন, ‘জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। যদি প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে তাহলে কেউই আমার জয় ঠেকাতে পারবে না।’

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এ নির্বাচন নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতি কাজ করছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ উপজেলা যাতে আরেকটি রক্তাক্ত জনপদে পরিণত না হয় সেটাই কামনা করছে সাধারণ মানুষ।

এ নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হওয়া আতঙ্ক সম্পর্কে স্থানীয় ভোটার শাজাহান আলী বলেন, ‘আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। কথা বলতে ভয় পাই। কখন কার ওপর খড়গ নেমে আসে আল্লাহই ভাল জানেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগরে কী হয় তা ভেবে সবাই আতঙ্কিত।’

আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অংশ হিসেবে শ্রীনগর ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াহেদুর রহমান জিঠু প্রতিদিনই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বা বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে তার হামলায় একাধিক বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থন হতাহত হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাডার বাহিনী গঠন করে বিরোধীদের ওপর তিনি নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, শ্রীনগর উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ উপজেলার মোট ৭৪ কেন্দ্রের মধ্যে সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে ২৯টি কেন্দ্রকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে প্রশাসন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ