পাঁচ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২২শ’ কোটি টাকা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুনঃতফসিলের নিয়ম শিথিল করার পরও পাঁচ ব্যাংকে ঝুঁকির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) প্রয়োজনের তুলনায় ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার ২৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসেম্বর ২০১৩ ভিত্তিক ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশন সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১০৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকেরিএক হাজার ৬৯১ কোটি ১০ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের ১২৬ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, গত ডিসেম্বর শেষে ২৫ হাজার ২৪২ কোটি টাকা প্রভিশনের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ২৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা সংরক্ষণ করেছে। এ সময় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিক তথা সেপ্টেম্বর শেষে ৩২ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রয়োজনের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি ছিল তিন হাজার ২৮২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ঋণ পুনঃতফসিলের কারণের সুযোগে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে। ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কমে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকগুলোকে কম পরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়েছে।
এদিকে সামনের দিনগুলোতে ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রভিশন রাখতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
সম্প্রতি ব্যাংকার্স সভায় তিনি বলেন, নীতি-নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের কারণে খেলাপি ঋণ আগের চেয়ে কমেছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমেছে।
তবে কম প্রভিশন সংরক্ষণ করে বেশি লাভ দেখালে পরে প্রয়োজনীয়তা বাড়লে তা সংরক্ষণ করা কষ্টসাধ্য হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিতভাবে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে তিনি জানান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর ২০১৩ শেষে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোতে প্র্রভিশন ঘাটতি ছিল ৪৭৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তবে গত ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে এক হাজার ৪৫৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এছাড়া গত সেপ্টেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল। ডিসেম্বর শেষে তা কমে পাঁচ ব্যাংকে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনীয় প্রভিশন হিসেবে ১০ হাজার ৭৭৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা রাখার কথা থাকলেও এ সময়ে তারা ১২ হাজার ২৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রেখেছে।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর নয় হাজার ৪৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা রাখার কথা থাকলেও ব্যাংকগুলো প্রভিশন হিসেবে রেখেছে নয় হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলো এক হাজার ১৫৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থলে প্রভিশন রেখেছে এক হাজার ২২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে তিন হাজার ৮২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাখার কথা থাকলেও ব্যাংকগুলো রেখেছে এক হাজার ৭৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৬ সালের জুনে ঋণের মান বিবেচনায় নিয়ে প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দিষ্ট হার ঠিক করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা সাধারণ ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহমূলক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ।