আ.লীগ ও বিএনপিতে অর্ধশত বিদ্রোহী প্রার্থী
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে হোঁচট খাওয়ার পরও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রায় অর্ধশত উপজেলায় অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে বৃহস্পতিবার ভোটারের মুখোমুখি হয়েছে। প্রায় একই পরিমাণ বিদ্রোহী প্রার্থী বিএনপিতেও রয়েছে। তবে প্রথম ধাপে ভালো ফল করায় ভোটের ময়দানে তারা বেশ উজ্জীবিত।
প্রথম ধাপে ৯৭ উপজেলার ফলাফলের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করতে দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু শীর্ষ নেতারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীরা সক্রিয় আছেন। এর পরিণতি জানা যাবে আজই।
প্রথম ধাপের ৯৭টি উপজেলার নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৪৪টি উপজেলায় জয়ী হন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী জিতেছেন ৩৪টি উপজেলায়। মূলত বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণেই আওয়ামী লীগ অপেক্ষাকৃত খারাপ ফল করে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচনের রাজনৈতিক স্বীকৃতি না থাকলেও সব দল নিজ দলের প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানানোয় পুরো নির্বাচনে রাজনৈতিক আবহ তৈরি হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি প্রমাণ করতে চায়, দেশের বেশির ভাগ জনমত তাদের পক্ষে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ভালো ফল করে ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচনকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে চায়।
দ্বিতীয় ধাপে আজ ১১৫টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৬২ দশমিক ৪৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। কমিশন আশা করছে, এ ধাপে আরও বেশি পরিমাণ ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং তাঁরা তাঁদের পছন্দের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
নির্বাচন কমিশন গত ২৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এর মধ্যে স্থানীয় ধর্মীয় উৎসবের কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীতে আজকের পরিবর্তে ১ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে চাঁদপুরের হাইমচরের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
১১৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫০০, ভাইস চেয়ারম্যান ৫০৬ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে মোট ভোটার এক কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৮ জন। এঁদের মধ্যে নারী ভোটার ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭১৮ এবং পুরুষ ৯৮ লাখ ৫ হাজার ১৫০ জন।
নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য মঙ্গলবার থেকে মাঠপর্যায়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে এক প্লাটুন সেনাসদস্য টহল দেবে। শনিবার পর্যন্ত তারা মাঠে অবস্থান করবে। এ ছাড়া নিয়মিত বাহিনী হিসেবে র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার থাকবে।
নির্বাচনে প্রস্তুতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, সবার অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪৬ উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী: নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা প্রার্থী তালিকা এবং প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ৬৪টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির একক প্রার্থী রয়েছেন ৬০টি উপজেলায়। দুই দলেরই অন্তত ৪৬টি করে উপজেলায় দুই বা এর অধিক প্রার্থী রয়েছেন।
৪৬ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ১১০ জন। একই পরিমাণ উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী ১০৪ জন।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের দুজন করে প্রার্থী রয়েছেন কক্সবাজারের চকরিয়া, কুমিল্লার দেবীদ্বার, কুড়িগ্রামের রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও রাজারহাট, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, চট্টগ্রামের পটিয়া, যশোরের ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া ও শার্শা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ও বিরামপুর, নওগাঁর আত্রাই, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বাগাতীপাড়া, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, চাটখিল ও সোনাইমুড়ী, পাবনার চাটমোহর, পিরোজপুরের কাউখালী, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, ফেনীর পরশুরাম, ফরিদপুরের নগরকান্দা, বাগেরহাটের কচুয়া ও ফকিরহাট, মাদারীপুরের রাজৈর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, মেহেরপুরের গাংনী, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল, দিনাজপুরের বদলগাছী, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা, নোয়াখালীর সদর, নরসিংদীর শিবপুর, ফরিদপুরের সালথা, মাগুরার মহম্মদপুর, মানিকগঞ্জের সদর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও সদর এবং সুনামগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীসংখ্যা তিন থেকে সাতজন পর্যন্ত। তবে দলের নির্দেশে বেশ কয়েকটি উপজেলার বিদ্রোহীরা এখন নিজেদের নিষ্ক্রিয় প্রার্থী বলে দাবি করছেন।
আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জের সদর ও কোটালীপাড়া উপজেলা দলের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এই দুই উপজেলায় তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।
বিএনপির বিদ্রোহী: বিএনপির দুজন করে প্রার্থী রয়েছেন কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও নাগেশ্বরী, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, চট্টগ্রামের পটিয়া, জামালপুরের ইসলামপুর ও বকশীগঞ্জ, জয়পুরহাটের কালাই ও ক্ষেতলাল, টাঙ্গাইলের সখীপুর, যশোরের বাঘারপাড়া, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, বিরামপুর ও বীরগঞ্জ, নওগাঁর পত্নীতলা ও আত্রাই, নাটোরের সদর, গুরুদাসপুর, বাগাতীপাড়া ও লালপুর, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, খালিয়াজুরী ও বারহাট্টা, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুরা, পিরোজপুরের কাউখালী, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, ফরিদপুরের নগরকান্দা ও বোয়ালমারী, বগুড়ার শিবগঞ্জ, বাগেরহাটের ফকিরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, মাগুরার মহম্মদপুর ও শালিখা, মাদারীপুরের শিবচর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, মুন্সীগঞ্জ সদর এবং ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে।
বিএনপির তিন থেকে পাঁচজন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, ঝিনাইদহের মহেশপুর, দিনাজপুরের বদলগাছী, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি, নরসিংদীর শিবপুর, ফেনীর পরশুরাম, বান্দরবানের লামা ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। বিএনপিও বেশি কিছু উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছে। এসব প্রার্থী এখন দল-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিনিধিদের তথ্যমতে, বিএনপি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। এর বাইরে কক্সবাজার চকরিয়া, কুষ্টিয়ার মিরপুর, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, জামালপুরের ইসলামপুর, জয়পুরহাটের কালাই ও সদর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, দিনাজপুরের বিরামপুর, নওগাঁর সাপাহার ও লালপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, বগুড়ার কাহালু ও শাহজাহানপুরসহ আরও কয়েকটি উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীর পাশাপাশি জামায়াতের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যে কারণে এসব উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে।